কাদের সমর্থকদের উল্লাস, আশরাফের বাড়িতে সোহেল তাজ

সম্মেলনের আগেই আওয়ামী লীগের আগামী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন তার সমর্থকরা।

সুমন মাহবুব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2016, 04:48 PM
Updated : 21 Oct 2016, 03:36 AM

অন‌্যদিকে ক্ষমতাসীন দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে দেখা গেছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমদ সোহেল তাজকে।

বাংলাদেশের অন‌্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহের মধ‌্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমেও চলছে ব‌্যাপক আলোচনা।

আগামী শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে দলটির ২০তম সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুদিনের কাউন্সিলে গঠিত হবে আগামী নেতৃত্ব।

কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা শেখ হাসিনা বললেও দলের নেতারা এজন‌্য তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রীরই দিকে।

এর মধ‌্যেই বর্তমান কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কয়েকজন সমর্থক ফেইসবুকে তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগাম অভিনন্দন জানান।

ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে লেখা ফেইসবুকে

ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কাদের ভাইর সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা বলেছি। উনি আমাকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী উনাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।”

বুধবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ডেকে নিয়েছিলেন বলে জানান ওই নেতা।

তবে ওবায়দুল কাদের বরাবরই নিজ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে বলে আসছেন, এই ধরনের খবরে ‘বিব্রত’ বোধ করছেন তিনি।

ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি সম্প্রতি বলেন, “নেত্রীর উপর আস্থা রয়েছে শতভাগ। আমরা সবাই তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।”

ওবায়দুল কাদের (ফাইল ছবি)

ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেরিয়ে এখন সভাপতিমণ্ডলীতে থাকার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন নোয়াখালীর কাদের।

এদিকে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাড়িতে বৃহস্পতিবার ঢুকতে দেখা গেছে সোহেল তাজকে। তিনি কয়েক ঘণ্টা সেখানে ছিলেন।

সোহেল তাজ বেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি গণভবনে যান। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর তিনি বেরিয়ে নিজের বাসায় ফেরেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তা জানা যায়নি।

সংসদ সদস‌্য সোহেল তাজকে ২০০৯ সালের সরকারে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন শেখ হাসিনা। তবে কিছু দিন পর তিনি পদত‌্যাগ করেন। গাজীপুরে তার আসনে এখন সংসদ সদস‌্য তার বোন সিমিন হোসেন রিমি।

বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে সম্মেলনস্থলে সৈয়দ আশরাফ

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনার বন্দি হওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার উল্টোযাত্রার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর পূর্ণ আস্থা অর্জন করেন আশরাফ।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরও একই দপ্তর পান তিনি।

সাত বছর গুরুত্বপূর্ণ ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার মধ্যে তার নিয়মিত সময় না দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ওঠে। 

এর মধ‌্যেই গত বছর আকস্মিকভাবে আশরাফকে দপ্তরবিহীন করেন শেখ হাসিনা। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড়ের মধ‌্যে এক সপ্তাহের মাথায় সিদ্ধান্ত পুনর্মূল‌্যায়ন করে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করেন তিনি।

এনিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আশরাফ। বুধবারও তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে সম্মেলনস্থলের কাজের তদারকি করতে যান।

তবে নতুন কমিটির বিষয়ে সব সবসময় নিশ্চুপ থাকছেন গণমাধ‌্যম এড়িয়ে চলা আশরাফ।

আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে দলীয় নেতারা বলে আসছেন। তবে টানা ৩৫ বছর এপদে দায়িত্ব পালনের পর বঙ্গবন্ধুকন‌্যা এখন বলছেন, অবসর পেলে খুশি হবেন তিনি।