শাহজাহান সিরাজ সঙ্কটাপন্ন

দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা পর্বের সাক্ষী শাহজাহান সিরাজ।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2016, 05:31 PM
Updated : 7 Sept 2016, 05:56 PM

বাকরুদ্ধ হয়ে এখন রাজধানীর অ‌্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কয়েক দিন থাকার পর এখন নিজের বাসায় রয়েছেন তিনি, চোখের পাতাও ঠিকমতো মেলতে পারছেন না বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।

চিকিৎসকরা ইতোমধ‌্যে ‘না’ বলে দিয়েছেন বলে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ।

“তারা (চিকিৎসকরা) বলে দিয়েছেন, বাসায় নিয়ে যান, আর কিছু করার নেই। এখন বাসায় নিয়ে এসেছি। উনি নির্বাক, চোখও খোলেন না। আমিও কিছু বলতে পারছি না…” বলতে বলতে আবেগে গলা ধরে আসে স্ত্রীর।

৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান সিরাজ ষাটের দশকে ছাত্রলীগের মাধ‌্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হন জাসদের সংগঠক।

বাম ঘরানা থেকে রাজনীতির জটিল অঙ্গনে উল্টো পথে হেঁটে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম‌্যান ছিলেন। তবে ফুসফুসের ক‌্যান্সারের কারণে অনেক দিন নিষ্ক্রিয় রাজনীতি থেকে।  

স্ত্রীর সঙ্গে শাহজাহান সিরাজ

হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর গুলশানের বাসায় আছেন এই রাজনীতিক। স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ, মেয়ে সারোয়াত সিরাজ ও ছেলে রাজীব সিরাজকে নিয়ে তার সংসার। ছেলে থাকেন বিদেশে।

রাবেয়া জানান, এখন ডাক দিলে একটু চোখ মেলে তাকাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেন না। চোখের পাতা মেললেই দুই পাশ দিয়ে পানি ঝরে অবিরত।

মুখে খাবার নিতে পারেন না, তাই নল দিয়ে খাবার দিতে হচ্ছে তাকে। 

রাবেয়া জানান, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ আগে থেকে ছিল তার স্বামীর। ২০১২ সালে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর কয়েক বছর পর ক‌্যান্সার ধরা পড়ে মস্তিষ্কেও।

জীবন সায়াহ্নে এসে রাজনীতিতে অনেকটা ম্লান এবং সমালোচিত হলেও আগে এমনটা ছিলেন না শাহজাহান সিরাজ।

মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র আন্দোলনের অন‌্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। তখন যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হত তারই একজন শাহজাহান সিরাজ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘ছাত্র আন্দোলনের নিউক্লিয়াস’র পক্ষে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

ওই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান ‘চার খলিফা’র আরেকজন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব। ‘চার খলিফা’র অন‌্য দুজন হলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী এবং ডাকসুর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ‘চার খলিফা’

(বাঁ থেকে) শাহজাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন

এদের মধ‌্যে মাখন মারা গেছেন, নুরে আলম সিদ্দিকী রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। আওয়ামী লীগ থেকে জাসদে যাওয়া আ স ম রব দলটির একটি অংশ নিয়ে চলছেন।

স্বাধীনতার পর রব-সিরাজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ভাঙন থেকে জাসদ গঠিত হলে সেই দলের সহ সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। তখন তাকে কিছু দিন কারাগারেও থাকতে হয়েছিল।

পরে জাসদ ভাঙতে ভাঙতে কয়েকটি ভাগ হলে একটি অংশের নেতৃত্ব ধরে রাখেন শাহজাহান সিরাজ। ১৯৯৫ সালে দল নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী হন তিনি।

১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেওয়া শাহজাহান সিরাজ ওই আসন থেকে বেশ কয়েকবার ওই এলাকা থেকে সংসদ সদস‌্য নির্বাচিত হন। টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের দুই বার ভিপি ছিলেন তিনি।

এই রাজনীতিকের স্ত্রী রাবেয়াও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বিএনপির সহযোগী সংগঠন মহিলা দলের নেত্রী থেকে এখন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক তিনি।