রামপাল দেশবিরোধী প্রকল্প: খালেদা

রামপাল প্রকল্পটি ‘দেশবিরোধী’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কাছ থেকে অন‌্য এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 12:04 PM
Updated : 24 August 2016, 12:04 PM

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি করলেও ভারতের জন‌্য লাভজনক হবে বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের পাশে রেখে বুধবার নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবি জানালেও কোনো কর্মসূচি দেননি খালেদা।

ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ‌্যোগে রামপালে যে তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, তা বিশ্ব ঐতিহ‌্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে দাবি করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বাম দলগুলো।

বিরোধিতার জবাবে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব‌্যবহার করে দূষণের মাত্রা ন‌্যূনতম রেখেই এই তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।

খালেদা জিয়া বলেন, “সুন্দবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন একটি দেশবিরোধী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। জনমত উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত জনগণের উপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে এই স্বৈরাচারী সরকার।”

প্রকল্পটি অন‌্য স্থানে সরাতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জায়গারও অনেক বিকল্পও আছে। কিন্তু সুন্দরবনে কোনো বিকল্প নেই।

“কাজেই সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধবংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার হঠকারী, অযৌক্তিক, অলাভজনক রামপালের সকল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”

রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

দেড় মাস পর সংবাদ সম্মেলনে আসা খালেদা ৩০ মিনিটের বক্তব‌্যে রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরেন। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি।

খালেদা গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, “এই বিষয়টা আমাদের সকলের। এটা শুধু বিএনপি, আওয়ামী লীগ অথবা অন্য কারও বিষয় নয়, এটা সারাদেশের বিষয়। সেজন্য আজকে কোনো প্রশ্ন না করে রামপালের বিষয়টি আপনারা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরুন। এটা আমরা অনুরোধ।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খণ্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন মনি।

গত সপ্তাহে জোটের বৈঠকে রামপাল নিয়ে কর্মসূচিতে যেতে মতৈক্য হয় বলে জাগপার প্রধান শফিউল আলম প্রধান জানিয়েছিলেন।

‘লাভ ভারতের’

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন‌্য একটি অলাভজনক প্রকল্প হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানি ১৫% বিনিয়োগ করে লাভের অর্ধেক অর্থ নিয়ে যাবে।

খালেদা জিয়া

“এই প্রকল্পের ১৫% অর্থ জোগান দেবে বাংলাদেশ পিডিবি, ১৫% ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি এবং বাকি ৭০% ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে। কোম্পানি বন্ধ হলে কিংবা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিডিবি কিনবে, আর যে নিট লাভ হবে তা ৫০% হারে পিডিবি ও এনটিপিসির মধ্যে ভাগ হবে। কিন্তু ১০০% পরিবেশ ধ্বংস হবে শুধুই বাংলাদেশের। ১৫% বিনিয়োগ করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ৫০% মুনাফা নেবে এবং ট্যাক্স ফ্রি সুবিধার আওতায় মুনাফার পুরো টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, এনটিপিসি ভারতের মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চেয়েছিল। বনের কাছে বলে ভারত সরকার তা অনুমোদন না করলেও বাংলাদেশে একই কাজ করা হচ্ছে।

“ভারতের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আইনে বাধা আছে। অথচ সেই দেশেরই একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজের দেশে যা করতে পারে না, শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে তা বাংলাদেশে করেছে। জনগণের প্রতি দায়িত্ব, দেশের স্বার্থের প্রতি উদাসীন বাংলাদেশ সরকার তার অনুমতি দিয়েছে।”

রামপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনে পিডিবিকেও ভর্তুকি দিয়ে জনগণের কাছে বিক্রি করতে হবে বলে সংস্থাটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

“যে প্রকল্প অলাভজনক, তা বাস্তবায়নে সরকারের যুক্তিহীন জেদ ও দ্রুত শুধু সন্দেহজনক নয়, দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

“পরিবেশ বিবেচনায় না নিলেও জেনে শুনে এমন একটি লোকসানি প্রকল্পে সরকার কী উদ্দেশ‌্যে এবং কার স্বার্থে জড়াল, সেটাই জনগণের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব নেই বলেই সরকার এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের পুলিশ দিয়ে লাঠি পেটা করছে।”

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের জন‌্য হুমকি এই প্রকল্পে ঋণ দিতে ফ্রান্সের তিনটি ব্যাংক এবং নরওয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তহবিলের অস্বীকৃতির কথাও তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের জন‌্য রামপালের প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

“কেবল তাই নয়, ফসলী জমি ও মাছের ঘের ভরাট করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত কৃষিজীবীদের সাথে সুন্দরবনে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহকারী, আশ-পাশের নদী ও খালের মাছ শিকার করে যে হাজার হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত, তারাও বেকার ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

“গোটা বিশ্ব যখন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপন্নতা নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন, তখন জেনে-শুনে দেশ ও দেশের কোটি কোটি জনগণকে নিশ্চিত বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের,” বলেন তিনি।