খুন হাজার, গুম পাঁচশ: ফখরুল

আওয়ামী লীগের আট বছরের শাসনকালে বিএনপির অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী খুন এবং পাঁচশ জন গুমের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2016, 11:33 AM
Updated : 17 August 2016, 11:33 AM

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গুম-খুন-নির্যাতনের’ শিকারদের সহায়তায় গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’র এক অনুষ্ঠানে এই পরিসংখ‌্যান তুলে ধরেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা হিসাব করেছি, এক হাজারের উপরে আমাদের নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, পাঁচশর অধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে, হাজারের উপরে পঙ্গু হয়েছে, অসংখ্য আহত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আসামি হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ জেলে গেছে।”

২০১০ সালের পর থেকে সরকারি নিপীড়ন বেড়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থেই একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এখানে এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে।

“এখানে মানবাধিকার বলতে কিছুই নেই, এখানে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই, এখানে গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে ‘বিশ্ব বিবেক একেবারেই নিশ্চুপ’ থাকার মধ‌্যে ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’র উদ‌্যোগের প্রশংসা করেন বিএনপির মহাসচিব।  

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত দুই বছরে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে গুম-খুনের শিকার বিএনপি ও ছাত্রদলের ৩১ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সূত্রাপুর থানা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু, ঢাকার ৭১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মো. চঞ্চল এবং বরিশাল মহানগরের ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফিরোজ খান কালুর পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং পুলিশের গুলিতে পঙ্গু মিরপুর বাংলা কলেজের সদস্য মো. আকরামের পরিবারকে সহায়তাও দেওয়া হয়।

হেল্প সেলের জ্যেষ্ঠ সদস্য বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নিখোঁজ সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী, চঞ্চলের শিশুপুত্র আহাদ, গোলাম রাব্বানীর শিশুকন‌্যা হৃদি তাদের মনবেদনার কথা তুলে ধরেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, কায়সার কামাল, শামসুজ্জামান, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, সহসভাপতি মাসুদ খান পারভেজ, হেলপ সেলের সুমন আহসান, মাসুম রাব্বানী, নুরুল আলম নুরু, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, অলি চৌধুরী, শরাফত জিকু, দেলোয়ার হোসেন দিদার, ফখরুল ইসলাম মাসুম, শাহ আলম মুনির, মেজবাহ উদ্দিন ভুঁইয়াও বক্তব্য রাখেন।

ফখরুল  বলেন, “ এই সংগঠনটি সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে যে কাজটি শুরু করেছে, এটা দেশপ্রেম থেকে করেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা দিতে বিএনপি গঠিত লিগ্যাল এইড কমিটি কাজ করছে বলেও জানান মহাসচিব ফখরুল।

‘সরকার জঙ্গিবাদকে জিইয়ে রাখতে চায়’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ দমন না করে রাজনৈতিকভাবে ব‌্যবহারের জন‌্য তা জিইয়ে রাখছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।  

তিনি বলেন, “দলমত নির্বিশেষ সকলকে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের আহবানে কর্ণপাত করেনি। কারণ তারা (সরকার) এই বিষয়টাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাচ্ছে।

“আমরা বার বার বলেছি, জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে এটাকে দমন করা যাবে না, প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।”

গুলশান হামলার পর খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান সরকারের প্রত্যাখ‌্যানের মধ‌্যে অন‌্য কারণ রয়েছে বলেও মনে করেন ফখরুল।

“আমরা বুঝি, এই ঐক‌্যের আহ্বানকে বাদ দেওয়া বা প্রত্যাখ‌্যান করার পেছনে একটাই কারণ আছে। তারা জানেন, দেশে ঐক্য গড়ে উঠলে তারা সেখানে একটা ভালো সুবিধা করতে পারবেন না।”

“আমরা হতাশ হয়ে যাই যখন দেখি যে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়কেই শুধু নাকচ করেই দিচ্ছেন না, তিনি বিরোধী দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন, বিরোধী দলকে এই বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত করবার চেষ্টা প্রথম থেকেই করে আসছেন,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।