কমিটি ঘোষণার পর ফাঁকা বিএনপি কার্যালয়

‘ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক কমিটি’ নিয়ে দল চাঙা হবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশাবাদ প্রকাশ করলেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2016, 11:35 AM
Updated : 7 August 2016, 06:26 PM

নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরদিন রোববার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল অনেকটাই ফাঁকা।

কার্যালয়ে কর্মীদের ভিড় ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা এমনকি মহাসচিব ফখরুলও যাননি নয়া পল্টনে।

কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর শনিবার মহাসচিব ফখরুল এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুমোদিত জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন।

কমিটি ঘোষণার পরপরই উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত‌্যাগের ঘোষণা দেন। আরও অনেক নেতা নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে গণমাধ‌্যমে মুখ খুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল নতুন কমিটিকে ‘ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক’ অভিহিত করলেও বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রত্ক্ষি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য ওবায়দুল কাদের ‘জাম্বো সাইজের’ এই কমিটিকে ‘তামাশা’ আখ‌্যায়িত করেছেন।  

কমিটি ঘোষণার পরদিন রোববার সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তৃতীয় তলায় দপ্তর বিভাগই খোলা। নতুন কমিটির তিনজন সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ ১২/১৫ জন কর্মী নিয়ে বসে আছেন, গল্প-গুজব করছেন।

অফিসকর্মীরা যথারীতি কার্যালয়ে ছিলেন। একজন কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দপ্তরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সারাদেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের সর্বশেষ তালিকা তৈরিতে হাত দিয়েছেন।

দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছেন বলে বিএনপি নেতারা জানান।

(ফাইল ছবি)

নগন‌্য সংখ‌্যক কর্মীদের মধ‌্যে থাকা মানিকগঞ্জ থেকে আসা কর্মী এবায়দুর রহমান হতাশা প্রকাশ করেন নেতাদের না দেখে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন কমিটি হয়েছে, অনেকের সঙ্গে দেখা হবে- এই আশায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমি হতাশ। একেবারে ফাঁকা মনে হচ্ছে। মনটাও ভালো নাই।”

নতুন কমিটিতে নারীদের যারা স্থান পেয়েছেন, তাদের একজন নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমীনের কণ্ঠেও হতাশার সুর।

“ভাবলাম অফিসে অনেক নেতা-কর্মী থাকবেন, কুশল বিনিময় করব। এসে দেখি উল্টোটা, কেউ নাই। এত যানজট পার হয়ে আসাটাই বৃথা হয়ে গেল,” আক্ষেপ করে বলেন তিনি।

পুরান ঢাকা থেকে আসা মহানগর বিএনপির সদস্য আবদুল মুকিত বলেন, “এবারের কমিটিতে নতুন প্রজন্মের নেতা-নেত্রী স্থান পেয়েছেন। এটা অনেকে ভালো চোখে নিচ্ছে না। সেজন্য ক্ষোভ আছে।”

এবার খালেদা জিয়া ৫০২ সদস‌্যের জাতীয় কমিটিতে শতাধিক নতুন  ‍মুখ এনেছেন। কেন্দ্রীয় ডজন খানেক নেতার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীরাও ঠাঁই পেয়েছেন কমিটিতে।

এদিকে রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কর্মী ছিল হাতেগোনা কজন। তবে নতুন কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত হন।

রাত সাড়ে ৯টায় বাসা থেকে কার্যালয়ে যান খালেদা। তাকে স্বাগত জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

নতুন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রুহুল আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুজাউদ্দিন আহমেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এছাড়াও ছিলেন নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, রুমিন ফারহানা, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুর এ আরা সাফা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস‌্য শফি আহমেদ চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, সিমিন ইসলাম, জিয়াউদ্দিন জিয়া, জাকির হোসেন, তৌহিদুর রহমান তৌহিদ, মনির হোসেন, আরিফুল হক প্রিন্স, আব্দুল কাদের জুয়েল, হারুনুর রশিদ হারুন।

অতীতে দেখা গেছে, দল অথবা সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণার পর সকালে নয়া পল্টন এবং রাতে গুলশানের কার্যালয়ে ভিড় জমাত নেতা-কর্মীরা।