জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে হাজারো মানুষের সংহতি

জঙ্গি প্রতিরোধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক এসেছে রাজধানীর এক সমাবেশ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2016, 03:57 PM
Updated : 11 July 2016, 04:06 PM

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে গুলশান ও শোলাকিয়ার সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্রতার অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ।

সোমবার বিকালে জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই প্রতিরোধ সমাবেশের আয়োজন করে ১৪ দলীয় জোট।

রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ।

জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “এটি সরকারের বিরোধিতা করার সময় না; এটি সরকারের সমালোচনা করার সময় না। এটি সরকারকে সহযোগিতা করার সময়। জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। ইতোমধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন।

“ছাত্র-শিক্ষক, অভিবাবক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাড়ায় মহল্লায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসাবাদ ও  সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে, কাউকে সন্দেহ হলেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে ধরিয়ে দিতে হবে।”

নাসিম বলেন, “এতদিন অনেকে নিখোঁজ হয়েছে, তখন আপনারা বলেছেন র্যা ব গুম করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে তারা (জঙ্গিরা) আমার বাংলার মানুষকে খুন করছে। খালেদা আপনি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে চান?”

প্রাক্তন শিবিরকর্মীরা জঙ্গি হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এদের সাথে মিলে খালেদা ক্ষমতায় যেতে চায়।”

সমাবেশে গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “গুলশানে হামলা হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের সাথে পাকিস্তান, দুবাই, ইংল্যান্ড থেকে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারেকের কর্মচারীর কথা বলে ফোনের মাধ্যমে ঢাকায় সারারাত ধরে একাধিকবার ফোন এসেছিল। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে এ ঘটনায় অন্য কেউ নয়, বিএনপি জামায়াত জড়িত।

“খালেদা বলেছেন নির্বাচন দিলেই এসব বন্ধ হবে। এটি যদি আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়, তাহলে নির্বাচন হলে আপনি কীভাবে এটি বন্ধ করবেন? এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আপনি এর সাথে জড়িত। দেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করতেই এ ধরনের আক্রমণ হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “জিয়া জামায়াতকে রাজনীতি করতে দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজকের হামলা হচ্ছে। শুরু হয়েছিল গুপ্তহত্যার মাধ্যমে। এরপর বিদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে, ঈদের জামাতে আক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু এবারও তারা পরাজিত হবেন।”

সমাবেশে নৌপরিবহন মন্ত্রীর ইঙ্গিতও ছিল বিএনপি জামায়াতের দিকে।

তিনি বলেন, মাদারীপুরের জঙ্গি ফাহিম হত্যার পর খালেদা যে মায়াকান্না করেছেন, তাই প্রমাণ করে খালেদা জঙ্গিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “পরাজিত শক্তি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, যা আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গুলশানের ঘটনার পরে খালেদা জিয়া সেই ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ বলে আখ্যায়িত করলেন। তিনি এর আগে হেফাজতকে এনেও অভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছিলেন। এখন আবার তিনি অভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখছেন।”

তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “বর্তমানে যে ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে, তার শুরু কোথায়? এসব ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে। আগুন সন্ত্রাস যারা করেছেন, তারাই একের পর এক ধারাবাহিক আক্রমণ করছেন। এসব আক্রমণের সাথে ধর্মের, ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এরা ইসলামের ক্ষতি করছে।”

তিনি বলেন, “১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি এরা। এদের ৭১ এও পরাজিত করেছি আমরা, এখনো করব। আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, জয় আমাদের হবেই।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন? ওইদিন গুলশানে নাকি রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয়েছে? তিনি বলছেন সরকারকে পদত্যাগ করতে। কেন ওনার এইসব কথা? নির্বাচন দিলে কীভাবে এই জঙ্গি সমস্যা সমাধান হবে? আসলে অদ্ভুত কথা বলছে বিএনপি।”

মোসাদের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের পর থেকেই দেশে জঙ্গি হামলা বেগবান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল। 

নতুন কর্মসূচি

সমাবেশের শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে জোট মুখপাত্র নাসিম বলেন, ২০ জুলাই ঢাকায় অভিভাবক সমাবেশ, ২১ জুলাই নারী সমাবেশ করা হবে।

তিনি বলেন, “অভিবাবক সমাবেশে আমরা তাদের বোঝাব, আপনার সন্তানের খবর রাখেন। সে কি করছে, সেদিকে নজর দেন। এরপর রংপুর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুমিল্লা যাব আমরা। পাড়া-মহল্লায় যাব, কমিটি করব; জঙ্গিবাদের উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করব।”

এদিকে ১৪ দলের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় থেকে আসার রাস্তা, দোয়েল চত্বর, ফুলার রোড ও চাংখার পুল থেকে আসার রাস্তায় বসানো হয় মেটাল ডিটেক্টর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হল থেকে শহীদ মিনারে আসার রাস্তা, পলাশি মোড় থেকে আসার রাস্তা, টিএসসি থেকে আসার রাস্তার মুখে পুলিশের চেকপোস্ট ও কাঁটাতারের বেষ্টনির বাইরেও লোক সমাগম দেখা গেছে।

১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা দেন জাসদ একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজিদুল হক, বাসদের সমন্বয়ক রেজাউল রশীদ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, স্বাচিপের মহাসচিব এম এ আজিজ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুর সবুর, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি হেলাল মোর্শেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জাতীয় পার্টি জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।