সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বুধবার ভারতের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
গারো ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে প্রমোদ মানকিন জাতীয়ভিত্তিক সামাজিক সংস্থা-ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তিনি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রমোদ মানকিনের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৮ এপ্রিল নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাকালজোড়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে এক গারো পরিবারে। তার বাবা প্রয়াত মেঘা তজু এবং মা হৃদয় শিসিলিয়া মানকিন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম।
১৯৬৩ সালে নটরডেম কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড করা প্রমোদের কর্মজীবনের শুরু স্কুল শিক্ষক হিসেবে। ১৯৮২ সালে তিনি আইনের ডিগ্রি নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রমোদ মানকিন।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন প্রমোদ মানকিন। মেঘালয় শিববাড়ি শরণার্থী শিবিরে ৫০ হাজার বাংলাদেশির দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
শিক্ষকতা থেকে আইনজীবী এবং তারপর এনজিওতে কাজ করেন প্রমোদ মানকিন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন তিনি। বর্তমানে তিনি হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
প্রমোদ মানকিন জাতীয় সংসদে ময়মনিসংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন চার বার। ১৯৯১ সালে রাজনীতিতে এসেই সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে আসেন।
২০০৯-২০১৪ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর দিকে প্রমোদ মানকিনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে তাকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।
ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন প্রমোদ।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সাবেক পরিচালক প্রমোদ মানকিন বাংলাদেশ সমবায় ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং হালুয়াঘাট কারিগরি ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তিনি।
মানবাধিকার সংগঠনেও সম্পৃক্ততা ছিল প্রমোদের- বাংলাদেশে মানবাধিকার সমন্বয় কাউন্সিল (সিসিএইচআরবি) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রমোদ মানকিন সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিরও সদস্য।
১৯৬৪ সালে গারো নেতা জোয়াকিম আশাক্রার মেয়ে মমতা আরেংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রমোদ মানকিনের। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে এই দম্পতির।