সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন আর নেই

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2016, 02:48 AM
Updated : 11 May 2016, 09:35 AM

ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিহংহ-হালুয়াঘাটের এই আওয়ামী লীগ নেতা গত প্রায় ২০ দিন ধরে মুম্বাইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। 

সেখানেই বুধবার ভোরে ৪টা ২৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক শোকবার্তায় জানানো হয়।

গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রমোদ মানকিন জাতীয় সংসদে ময়মনিসংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন চার বার। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।   

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত এই নেতার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রয়াত প্রতিমন্ত্রীর মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে পৌঁছানোর পর কফিন প্রথমে নেওয়া হবে বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে। এরপর প্রার্থনা সভার জন্য নেওয়া হবে কাকরাইলের রমনা চার্চে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় বেলা আড়াইটায় এই আওয়ামী নেতার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রার্থনা সভা হবে। সেখান থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে ময়মনসিংহে।

ময়মনসিংহ সদর ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা সভার পর প্রমোদ মানকিনের মরদেহ নেওয়া হবে হালুয়াঘাটে, তার নিজের বাড়িতে। শুক্রবার হালুয়াঘাট মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাকে সমাধীস্থ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাকালজোড়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে এক গারো খ্রিস্টান পরিবারে প্রমোদ মানকিনের জন্ম।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে দিয়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৬৩ সালে নটরডেম কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড করা প্রমোদ কর্মজীবন শুরু করেন স্কুল শিক্ষক হিসেবে। এর মধ্যেই তিনি আইনের ডিগ্রি নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। 

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন প্রমোদ মানকিন। মেঘালয় শিববাড়ি শরণার্থী শিবিরে ৫০ হাজার বাংলাদেশির দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

আইন পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন প্রমোদ মানকিন।  ১৯৮৭ সাল থেকে তিন বছর কাজ করেন কারিতাসে।

এইচএম এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৯১ সালের ভোটে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আরও তিন দফা তাকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ার ভোটাররা।

২০০৯-২০১৪ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর দিকে প্রমোদ মানকিনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে তাকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে আবারও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রমোদ মানকিনকে। গতবছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পর থেকে প্রমোদই মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করে আসছিলেন।   

রাজনীতি ও আইনপেশা ছাড়াও আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে সক্রিয় ছিলেন প্রমোদ মানকিন। কাজ করেছেন বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও।

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশে মানবাধিকার সমন্বয় কাউন্সিল, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সোসাইটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মানবাধিকার কমিশন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং গোবরাকুড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৬৪ সালে গারো নেতা জোয়াকিম আশাক্রার মেয়ে মমতা আরেংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রমোদ মানকিনে। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে এই দম্পতির।