রওশনের চোখে ‘ত্যাগী’ মওদুদ-শাহ মোয়াজ্জেম

বারবার দল পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচিত মওদুদ আহমেদ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে ‘ত্যাগী’ নেতার স্বীকৃতি দিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2016, 01:09 PM
Updated : 24 April 2016, 01:18 PM

স্বামী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে দল পরিচালনা নিয়ে বিরোধের মধ্যে তিনি রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ত্যাগী’ নেতাদের দলে ফেরার আহ্বান জানান।

রওশন বলেন, “মওদুদ সাহেব, শাহ মোয়াজ্জেম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো ত্যাগী নেতা একসময় আমাদের চেয়ারম্যানের পাশে ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পাশে এখন কারা?”

বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভা হয়ে জাতীয় পার্টিতে আসা শাহ মোয়াজ্জেম এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান। মওদুদও একই দলের স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন। 

এরশাদের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মিজানুর রহমান চৌধুরী শেষে তার পুরনো দল আওয়ামী লীগে ফিরে গিয়েছিলেন। বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী মঞ্জু এরশাদের দল থেকে বেরিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করে সক্রিয়।

রওশন বলেন, “আজ আমি এখন বয়সে পৌঁছেছি, আমার কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি জাতীয় পার্টিতে কোনো সমন্বয়হীনতা দেখতে চাই না। একটাই চাওয়া পুরনোদের জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনা।

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও মওদুদ আহমেদ

“জাতীয় পার্টি থেকে যেসব নেতা চলে গেছেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন। তারা আসুন। আমরা অধীর আগ্রহে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

দুই বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিভেদ দেখা দেয়। নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে এরশাদের হাসপাতালে থাকার মধ্যেই রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়।

বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে। রওশন বিরোধীদলীয় নেতা হন, সংসদ সদস্য হয়ে এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। দলের দুজন নেতা মন্ত্রীও হন।  

এরপর কিছুদিন বিরোধ চাপা থাকলেও সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারকে মহাসচিব করলে বিরোধ ফের প্রকাশ্য হয়।

এরশাদ আগামী ১৪ মে জাতীয় পার্টির সম্মেলন ডাকার পর রোববার সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে দল পরিচালনায় এরশাদের একক কর্তৃত্বের সমালোচনা করে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এই সামরিক শাসককে ‘গণতান্ত্রিক’ হওয়ার আহ্বান জানান রওশন।  

রওশন এরশাদ (ফাইল ছবি)

“চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করব, একক সিদ্ধান্ত না নিতে, কর্মীদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই দল কোনো ব্যক্তিগত কোম্পানি নয়। সকল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের দল।”

জাতীয় পার্টির সরকারে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত এখন ‘ভুল’ বলে মনে করছেন এরশাদ, তার ভাই কাদেরও তা সমর্থন করেন। তবে রওশনসহ যারা জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন, তারা এর উল্টো ভাবছেন।  

রওশন বলেন, “একক ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। যদি আমরা তৃণমূলের সঙ্গে এবং প্রেসিডিয়ামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতাম, তাহলে বিগত দিনের নির্বাচনে আরও ভালো ফলাফল পেতাম।

“বাংলাদেশের কোথাও আমরা চেয়ারম্যান-মেয়র নির্বাচন ভালো করতে পারিনি। ইউনিয়ন নির্বাচনে ভালো করতে পারিনি। বিগত দিনগুলোতে আমাদের জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।”

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে যে ধারার বলে স্বামী এরশাদ দলে ‘একক কর্তৃত্ব’ চালাচ্ছেন, তা বাতিলের দাবিও জানান রওশন, যাকে রেখেই আবার বিয়ে করেছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

রোববার সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এইচ এম এরশাদ ও রওশন, দুজনের মনোযোগ দুদিকে

“দলের গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বাতিল কিংবা পরিবর্তন করা দরকার, যাতে গণতান্ত্রিক হয়। দলে যদি গণতন্ত্র না থাকে তবে দেশে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? গণতন্ত্রের চর্চা দলের ভেতরেই হতে হবে।”

সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আগামী কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের দাবিও জানান জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।  

তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিব যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে সম্মেলনের দরকার নেই। চেয়ারম্যান নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তবে তার কিছু সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

একক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে এরশাদকে বারবার আহ্বান জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না রওশনের অনুসারীরা, যারা দলীয় কার্যালয়ে না গিয়ে সংসদ ভবনকেন্দ্রিক কাজ চালাচ্ছেন।   

এরশাদ সাড়া না দিলে কী করবেন- সে প্রশ্নে আনিসুল বলেন, “সময় সীমা বেঁধে কাজ করছি না। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। পরিণতি দেখেই আমরা পদক্ষেপ নেব। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যেমন ফিল করি, তেমন উনিও ফিল করবেন। পজেটিভ রেসপন্স চাইছি।”