বিএনপির কাউন্সিল উদ্বোধন

বিএনপির কাউন্সিল উদ্বোধন করেছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2016, 03:23 AM
Updated : 19 March 2016, 03:09 PM

সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন উড়িয়ে ষষ্ঠ কাউন্সিল উদ্বোধন হয়। বিকালে বসে কর্মঅধিবেশন।

ছয় বছর পর বিএনপির কাউন্সিল হচ্ছে। দলের দুই শীর্ষ পদ চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইতোমধ্যে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান।

মধ্যরাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে অনুষ্ঠান সাজানোর বেশ কিছু উপকরণ ভিজে গিয়েছিল। বিশাল মঞ্চের সামনে রাখা লাল কার্পেটটি ভিজে চুবচুবে হওয়ায় তা পাল্টানো হয়।

বৈরী আবহাওয়ার ঝাপলা সামলে সকালেই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তার তদারকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সকাল পৌনে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার সাদা নিশান গাড়ি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ফটক দিয়ে ঢোকে।

কাউন্সিলর-প্রতিনিধিসহ নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে গাড়ি থেকে নামেন হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরা বিএনপি চেয়ারপারসন। তার যাওয়ার পথে মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এরপর অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল তোলেন দলীয় পতাকা।

১৯৮৯ সালে মার্চে এই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করেছিলেন খালেদা। ২৭ বছর পর একই স্থানে কাউন্সিল করছে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি।

খালেদাআসন নিয়েছেন অনুষ্ঠানমঞ্চে। মঞ্চের পেছনে তার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের ছবি রয়েছে।

মঞ্চের বাম দিকে গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার নেতাদের ছবি সম্বলিত ‘হিরোজ নেভার ডাই’ শিরোনামে বিশাল ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর ছবিও রয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চের বাম দিকে স্থাপন করা হয়েছিল ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাষণের ভিডিও প্রচারের জন্য।

মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান।

শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল। তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে দলীয় চেয়ারপারসনের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, “গণতন্ত্র মানেই খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়া মানেই গণতন্ত্র।”

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, কবি আল মুজাহিদী, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ ছিলেন।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, কুয়েতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। তাদের কয়েকজন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন অলি আহমদ, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, মোস্তফা জামাল হায়দার, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, রেদোয়ান আহমেদ, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, আহমেদ আবদুল কাদের, সাহাদাত হোসেন সেলিম, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম মোরশেদ খান, রাবেয়া চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, হারুন আল রশীদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাহমুদুল হাসান, ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, মীর নাসিরউদ্দিন, এ জে মোহাম্মদ আলী, মুশফিকুর রহমান, আবদুল হালিম, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমীনুল হক, আবদুল কাইয়ুম, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জহুরুল ইসলাম, আহমেদ আজম খান, মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুল হাবিব দুলু, ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, গোলাম আকবর খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, জিএম ফজলুল হক, কাজী আসাদুজ্জামান, সৈয়দ মোয়জ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নিতাই রায় চৌধুরী, কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, শামা ওবায়েদ।  

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

কাউন্সিল ঘিরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকা সাজানো হয়েছে রঙিন পতাকায়। মূল ফটকে বড় ব্যানারে লেখা আছে- ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’। এটিই বিএনপির এবারের সম্মেলনের স্লোগান।

কাউন্সিলে যোগ দিতে সকাল ৮টা থেকেই নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। মূল প্যান্ডেলে পরিচয়পত্র দেখিয়ে কাউন্সিলরদের ঢুকতে হচ্ছিল বলে লম্বা লাইন তৈরি হয়।

তিন হাজার কাউন্সিলরের সঙ্গে ৪৫ হাজার প্রতিনিধি এবং ১৬ হাজার অতিথির বসার ব্যবস্থা করেছে বিএনপি। এজন্য সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশও ব্যবহার করা হচ্ছে।

নতুন কমিটি গঠনের পাশাপাশি গঠনতন্ত্রের আরও কিছু সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদিত হবে এই কাউন্সিলে। তবে কী কী ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে, তা জানানো হয়নি।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরে শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিল হয়েছিল। তারপর ব্যর্থ আন্দোলন এবং নির্বাচন বর্জনের পর মামলা-হামলা পেরিয়ে নতুন করে দলকে উজ্জীবিত করার চ্যালেঞ্জ এখন খালেদা জিয়ার সামনে।