জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের ভাঙনের পর দলটির নির্বাচনী প্রতীক মশাল নিয়ে নতুন জটিলতার শঙ্কা উঁকি দিতে শুরু করেছে।
Published : 13 Mar 2016, 10:03 PM
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ত্রয়োদশ দল জাসদের দুটি অংশই নিজেদের ‘মূল জাসদ’ বলে দাবি করেছে; দাবি তুলেছে প্রতীক মশালের। শিগগিরই নতুন নেতৃত্বের কমিটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজির হবেন বলে দুই অংশের নেতারাই জানিয়েছেন।
জাসদের প্রতীক মশাল
জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষিত এই কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে সংসদ সদস্য মাইনুদ্দিন খান বাদলকে, যিনি আগের কমিটির কার্যকরী সদস্য।
জাসদের কোনো অংশই একে অপরকে বহিষ্কার বা দলীয় সংসদ সদস্য পদ বাতিল নিয়ে ভাবছে না। তবে দলীয় প্রতীক নিয়ে শিগগিরই জটিলতার আভাস মিলেছে।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন যাছাই-বাছাই কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব বা দলীয় প্রতীকের দাবি নিয়ে কোনো ধরনের চিঠি আমরা পাইনি। তেমন কোনো দাবি পেলে তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাবলোচনার বিষয়টি কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।”
ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বাহাত্তর সাল থেকেই জাসদ; আমাদের প্রতীক মশাল। নিজেদের মূল দলের বাইরে অন্য কোনো কিছু বিবেচনা বা ভাববার সুযোগ নেই।”
দুয়েক দিনের মধ্যে নতুন কমিটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য ইসিকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
“জাসদ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আমরা অনেকবার এমন সমস্যার মুখে পড়েছি। এবারও তা আমরা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আইন ও নীতির আলোকে সব হবে, সব কিছুই আইনি পদক্ষেপে হবে,” বলেন এই সংসদ সদস্য।
যারা আলাদা হওয়ার কথা বলছেন, তারা শিগগিরই ফিরে আসবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শিরিন। এক্ষেত্রে দল থেকে কাউকে বহিষ্কার বা সংসদ সদস্য পদ বাতিল সংক্রান্ত কোনো জটিলতাও তৈরি হবে না বলে তার বিশ্বাস।
“এখনো আমরা অপেক্ষায় আছি- তারা ফিরে আসবেন। তাদের কমিটিতেও রাখা হয়েছে। বহিষ্কার বা অন্য কিছু ভাববার সময় নয় এখন। আমরা জাসদে সবাই থাকব, তারাও ফিরবেন।”
তবে একই মশালে না ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে আম্বিয়া-প্রধানের কমিটি।
বাদল জানিয়েছেন, শিগগিরই তারা নির্বাচন কমিশনে নিজেদের কমিটির তালিকা জমা দেবেন।
“জাসদের মশাল নিয়ে কেউ দাবিদার এলে আমরা প্রমাণ দিয়েই তা নিজেদের করে নেব। সব কিছুর প্রমাণ আমাদের হাতে।”
তিনিও আশা করছেন, নেতৃত্ব নিয়ে কেউ কাউকে বহিষ্কার বা সংসদ সদস্য পদ বাতিলের মতো পরিস্থিতিতে যেতে হবে না।
“আমরা মূল দল। আমরা সবাই জাসদের হয়ে সংসদে এসেছি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বহিষ্কার করে সদস্য পদ বাতিলের মতো কোনো ডিসপিউট তৈরি হবে না। যদি এমন কিছু হয় তা হবে স্রেফ পাগলামি। রাজনৈতিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ এভাবে হবে না আশা করি। যে যেখানে আছে আমরা সেভাবেই জাসদের সংসদ সদস্য হয়ে থাকব,” বলেন বাদল।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো সংসদ সদস্য দল থেকে বহিষ্কার হলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় সংসদের বিবেচনার বিষয় হবে। তার আগে দলের বিভাজন নিয়ে আগাম কোনো সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ নেই।
যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী বলেন, “স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানি না আমরা। যখনই এ সংক্রান্ত তালিকা বা চিঠি পাব, তখন এ নিয়ে কমিশনের মতামত নেওয়া হবে। গত বছর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার ও প্রতীক নিয়ে এনপিপির জটিলতাও কমিশনে উপস্থাপন হয়েছে। তারই কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।”
বর্তমানে ইসিতে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির (আ স ম আবদুর রব ও আবদুল মালেক রতন) প্রতীক তারা। পঞ্চদশ দল হিসেবে নিবন্ধিত হয় দলটি।
২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ত্রয়োদশ রাজনৈতিক দল হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদ।
এ পর্যন্ত প্রতীক ও বহিষ্কারের ফল
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টি ও জেপির মধ্যে বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কাছেই লাঙ্গল থাকে।
২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় জাতীয় পার্টি নামে চারটি দল আবেদন করলে ইসি জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি নামে আলাদা নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দেয়।
মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ ও জাসদের দুটি অংশও আলাদাভাবে নিবন্ধন পেয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও সাংসদ পদে টিকে থাকার নজির এ দেশের কয়েকটি রয়েছে।
চারদলীয় জোটের আমলে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- সে প্রশ্ন উঠলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তখনকার স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলে তার সংসদ সদস্য পদও একইভাবে বহাল থাকে।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তার সাংসদ পদ নিয়ে সংসদ সচিবালয় ইসিকে চিঠি দেয়। বিষয়টি নিয়ে ইসির শুনানিতে উপস্থিত হয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন লতিফ।