হাসানুল হক ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদ থেকে বেরিয়ে আসা মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেছেন, মন্ত্রী হওয়ার পর দলীয় প্রধান ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে এটা হয়েছে।
Published : 13 Mar 2016, 04:41 PM
জাসদ সভাপতি ইনুর আর্থিক সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য দলছুট এই নেতা।
জাতীয় সংসদ ভবনে রোববার নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের সাংসদ বাদল বলেন, “মন্ত্রী হওয়ার পর আর্থিক বিষয়ে উনার (ইনু) আচরণ সম্পর্কে দলে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা আছে, অস্বচ্ছতা আছে। দলীয় সভাপতি ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ,ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি তাই নিয়েছেন।
“আমাদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি ছয় বছর আমাদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে কোনো কাজ করতে দেন নাই; বাধা সৃষ্টি করেছেন।”
জাসদে আকস্মিক এই ভাঙনও হয়েছে কাউন্সিলে নতুন সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে। ওই পদে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ শিরিন আক্তারের নাম প্রস্তাব হলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আরেক সাংসদ নাজমুল হক প্রধানের নাম আসে।
মঈন উদ্দীন খান বাদল (ফাইল ছবি)
বিদ্রোহী কমিটিতে কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া বাদলের দাবি, দশম সংসদে দল থেকে যে ছয়জন সাংসদ আছেন তাদের চারজনই তাদের সঙ্গে। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের ১০ জনই বেরিয়ে এসেছেন।
দল ভাঙার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না জানিয়ে ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের কার্যকরী সভাপতি বাদল বলেন, “আমরা দল ভাঙিনি,ভাঙতে চাইনি,ভাঙার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।
“এই ভাঙন কমিটির সাথে আচরণ এবং দীর্ঘ দিন জমে থাকা ক্রোধের বিস্ফোরণ।”
দলে থাকতে ছেড়ে আসা নেতাকে ছাড় এবং তার বিভিন্ন আচরণে কষ্ট পাওয়ার কথা উঠে এসেছে মঈন উদ্দীন খান বাদলের কথায়।
তিনি বলেন,“আমাদের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত ছিল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কার্যকরী সভাপতি একবারের বেশি স্বপদে থাকতে পারবেন না। সে একবারের বদলে আমরা তিনবার (ইনুর সভাপতিত্ব) পার করে দিয়েছি।
“আমাদের দলে কথা উঠেছিল, দলের কেউ যদি নির্বাহী দায়িত্ব গ্রহণ করেন তবে তিনি দলের পদে থাকতে পারবেন না। যে কোনো একটি দায়িত্ব রাখতে পারবেন।
“আমাদের ক্ষেত্রে এই দুটি বিষয়ে আলোচনা করে হাসানুল হক ইনুকে কাউন্সিলররা সুযোগ দিয়েছে। উনি সভাপতি ও মন্ত্রী দুটোই থাকতে পারবেন।”
তবে ইনুর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া থেকে সমস্যার সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেন বাদল।
“কিন্তু সেখানে আমরা লক্ষ্য করলাম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিরিন আক্তারের নাম প্রস্তাব করা হল। এটা আসতেও পারে। তার নাম প্রস্তাব করার পর সমর্থন করা হয়েছে। সেটাও হতে পারে। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে কেউ বললো পাস পাস, শিরিন আক্তার পাস। সেটাও হতে পারে।
“কিন্তু আপনার (ইনু) অনুগ্রহপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার বলতে পারে না, পাস হয়ে গেছে।”
কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে আসার কারণ ব্যাখ্যায় বাদল বলেন, “আমাদের দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাজমুল হক প্রধানের নাম প্রস্তাব করেন। তখন অনেক কাউন্সিলরও সমর্থন করেছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন বলল- আপনারা ১ ঘণ্টার সময় দিন, খাওয়া-দাওয়া করেন আমরা গোপন ব্যালটের প্রস্তাব করছি। তারা (নির্বাচন কমিশন) যখন এই কথা বলছে,তখন পেশি শক্তি গ্রুপ শ্লোগান দিচ্ছে- ‘ইনু-শিরিন এগিয়ে চলো,আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘শিরিন পাস হয়ে গেছে’।
“নাজমুল হক প্রধান কথা বলার সুযোগ চেয়েছেন,তখন নির্বাচন কমিশন বলল- আপনি এখন কথা বলতে পারবেন না। নাজমুল হক প্রধান সভাপতি ইনুর কাছে কথা বলার সুযোগ চেয়ে বলেছেন,আপনি আমাকে কথা বলতে না দিলে আমি চলে যাব। তারপরও তিনি তাকিয়ে দেখেছেন,কিছুই বলেননি।
“আমরা তাকে (ইনু) বার বার বলেছি,সম্মেলনে কাউন্সিলরদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে দিন। কাউন্সিলরদের রায় আমরা নত চিত্তে মেনে নেওয়ার কথাও বলেছি। কিন্তু আপনার (ইনু) হঠকারী কর্মকাণ্ড, তথাকথিত মন্ত্রিত্বের ঔদ্ধত্যের কারণে কাউন্সিল ধ্বংস হয়েছে। এর উত্তর উনাকেই (ইনু) দিতে হবে।
“ভাঙতে চাইনি, ভাঙন কাঁধের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তবে এই ভাঙনে জাসদ হারিয়ে যাবে না বলে মনে করেন এর আগেও একবার দল থেকে বেরিয়ে ফিরে আসা বাদল।
“আমরা বিশ্বাস করি, এই দলটি যতবার ভেঙেছে ফিনিক্স পাখির মতো ছাই থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।”
একই নামে তারাও ১৪ দলে থাকবেন বলে জানান তিনি।
দলীয় কার্যালয় নিয়ে বাদল বলেন, আপাতত তাদের কোনো নির্দিষ্ট অফিস নেই। জাসদের যে অফিসটি রয়েছে তা চারজনের নামে। এরমধ্যে একজন কাজী আরেফ আহমেদ মারা গেছেন। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন হাসানুল হক ইনু।
“বাকি দুইজন আমাদের সঙ্গে আছে। এটা আইনি বিষয়, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।