বিচারপতি শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি বিএনপির

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কথা’ গোপন করেছেন অভিযোগ করে তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2016, 08:28 AM
Updated : 20 Feb 2016, 09:01 AM

শনিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ছিল দ্বৈত নাগরিকত্ব। যার অন্যদেশের প্রতি আনুগত্য থাকে, সে কখনোই নিজ দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে পারে না, এর দ্বারা শুভ কাজ বা ন্যায়বিচার হতে পারে না। ”

একজন বিচারপতির কীভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারে- এমন প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, “দ্বৈত নাগরিকত্ব লুকিয়ে রেখে বিচারপতির দায়িত্ব পালনের জন্য বিচারাঙ্গনের সাবেক এই ‘ব্ল্যাকশিপ’ বা ‘কুলাঙ্গরের’ বিচার হওয়া উচিৎ।

“আমরা মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে তার বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে।”

গতবছর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া শামসুদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে প্রধানবিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। 

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরের পর লেখা রায় ও আদেশ না নিতে ‘নির্দেশনা’ দেওয়ায় সম্প্রতি তার পদত্যাগ দাবি করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন।

এর আগে গত বছর ‘সংবিধান লঙ্ঘন, শপথভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ’ তুলে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “বর্তমান অবৈধ সরকার নিজেদের একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য যাদেরকে ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক ছিলেন অন্যতম। তাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সরকার নিজেদের ইচ্ছা পূরণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।”

উচ্চ আদালতকে ‘আওয়ামীকরণের অশুভ পরিকল্পনা’ নিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরী বিচারপতি হিসেবে কাজ করে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

“এটা করতে গিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ বিচাপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকরা বিচারপতির নিরপেক্ষতাকে অপবিত্র করেছেন, ক্ষুণ্ন করেছেন। সরকার তাদের গণতন্ত্র হত্যার ‘কিলিং মিশনের’ দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই মিশন তারা বাস্তবায়ন করেছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে।”

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখাকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলায় তাকে জোর সমর্থন দিয়ে আসছে বিএনপি। তাদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ও ‘অবৈধ’ প্রমাণিত হয়েছে।

প্রার্থী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে বন্দি রাখতে সরকার প্রতিদিনই একের পর এক অশুভ পরিকল্পনা এঁটে চলছে। একদিকে গুম-খুন-বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতি, অন্যদিকে মিথ্যা মামলার হিড়িক ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, একদলীয় শাসনের লক্ষ্যে পৌঁছানো। ”

রিজভী দাবি করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান প্রার্থী সাতক্ষীরা যুবদলের আহবায়ক শাহিনুর রহমান শাহিনকে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সাবেক সভাপতি আবদুর রবকে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।   

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।