‘দেয়ার ইজ নো সঙ্কট ইন জাতীয় পার্টি’

ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণার পর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ দেখা দিলেও দলে কোনো সঙ্কট দেখছেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2016, 01:53 PM
Updated : 19 Jan 2016, 02:51 PM

তবে মঙ্গলবার যে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেছেন, সেখান থেকেই দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন সাবেক এই সামরিক শাসক।

প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদারকে নতুন করে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে,যিনি ৫ জানুয়ারির ভোটে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় এই পদ হারিয়েছিলেন।

আগের রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের বৈঠকের পর রওশন এরশাদকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ ঘোষণার জন্য বাবলুকে পদ হারাতে হলেও রওশনের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি এরশাদের।

“আমরা একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুইজন নেতা সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ, বিভেদ নাই। থাকতে পারে না। আমি দল পরিচালনা করি, তিনি সংসদ পরিচালনা করছেন,” বলেছেন তিনি।

দশম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টি থেকে রওশন বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলে প্রভাব নিয়ে এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্বের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসতে থাকে।

গত রোববার রংপুরে এক দলীয় সভায় ছোটভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং উত্তসূরি ঘোষণা করেন এরশাদ।

তার এ ঘোষণার পরদিন রাতে ঢাকায় এক বৈঠকের পর রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ঘোষণা করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

রওশনের বাসায় ওই বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও ছিলেন।

রাতের ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন এরশাদ।

রংপুর থেকে দুপুর ১টায় ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি দলীয় কার্যালয়ে আসেন তিনি।

জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে দুই পাশে বসিয়ে বাবলুকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন।

রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার পর তড়িঘড়ি করে ঢাকায় এসেছেন বলে গণমাধ্যমের খবর নাকচ করেন এরশাদ।

‘এই সংবাদ সম্মেলন পূর্বনির্ধারিত ছিল’ বলে দাবি করেন তিনি।

রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার পর সোমবার রাতে রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে একে অবৈধ বলেন এরশাদ।

দলের সভাপতিমণ্ডলীয় সভা ডাকার এখতিয়ার শুধু তার জানিয়ে তিনি বলেন, “ডাকলেও তা হবে গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করাটাও অবৈধ। যারা করেছে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।”

তার ওই প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার এরশাদ বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে- আমি বলেছি রওশন অবৈধ। এটা কি সম্ভব?

“রওশনকে কি আমি কখনও অবৈধ বলতে পারি?”

এ সময় উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, “না..না..না..।”

দলে কোনো সঙ্কট নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “অসম্ভব..অসম্ভব..দেয়ার ইজ নো সঙ্কট ইন জাতীয় পার্টি। আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি জাতীয় পার্টিতে কোনো সংকট নাই। নো ওয়ান কুড ব্রেক ইট।”

দলীয় কোনো ফোরামে আলোচনা ছাড়াই মহাসচিবের পদে রদবদলের ঘোষণা গণতান্ত্রিক কি না-এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সামরিক শাসক বলেন, জাতীয় পার্টির ‘সর্বময় ক্ষমতার’ অধিকারী তিনি এবং দল থেকেই তাকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

“আমি এই দলের চেয়ারম্যান। দলে নতুন পদ সৃষ্টি এবং তাতে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার আমার আছে। ব্যারিস্টার আনিসকে একবার অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করেছিলাম প্রেসিডিয়ামে আলোচনা না করেই। বাবলুকে যখন মহাসচিব করেছিলাম, তা প্রেসিডিয়ামে আলোচনা হয়নি। দলের গঠনতন্ত্রে বিশেষ উপদেষ্টা নামে কোনো পদ ছিল না। আমি সেই পদ সৃষ্টি করে ববি হাজ্জাজকে এর জন্য মনোনীত করেছিলাম। তখন তো প্রেসিডিয়ামে আলোচনার কথা ওঠেনি।”

রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব ঘোষণা করে এরশাদ বলেন, “চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে আমি হাওলাদারকে সরিয়ে বাবলুকে মহাসচিব করেছিলাম। আজ বাবলুকে সরিয়ে হাওলাদারকে মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করলাম। আমার সেই এখতিয়ার আছে।”

যে বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলো সেটা নিয়েও আপত্তি রয়েছে তার।

“রওশন প্রেসিডিয়াম মিটিং ডাকেনি। কারণ দলের প্রেসিডিয়াম মিটিং আহ্বান করার এখতিয়ার আছে একমাত্র আমার। ওটা কোনো প্রেসিডিয়াম মিটিং ছিল না। আর একটা কথা- এটা আমার পার্টি, রওশন হতে পারে….কিন্তু বাবলু ঘোষণা দেয়ার কে?”

মহাসচিব পদ থেকে বাবলুকে অব্যাহতি দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাবলু মহাসচিব ছিলেন দু্ই বছর। এই দুই বছরে কোনো প্রেসিডিয়াম মিটিং তিনি করতে পারেননি, বর্ধিত সভা করতে পারেননি।

“সামনে দলের কাউন্সিল…এ পর্যন্ত ৪০টি কাউন্সিল মিটিং হয়েছে। সবগুলোতে আমাকে থাকতে হয়েছে। মহাসচিব থাকতে এই বয়সে আমাকে এত ছুটোছুটি করতে হবে কেন? তাই দলের স্বার্থেই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।”

দলে কো-চেয়ারম্যানের পদ না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এরশাদ বলেন, “এখন নেই, আগামী কাউন্সিলে তা পাশ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।”