ভাইকে উত্তরসূরি ঘোষণা করলেন এরশাদ

ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বানিয়ে তাকে নিজের উত্তরসূরি ঘোষণা করেছেন দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2016, 03:08 PM
Updated : 19 Jan 2016, 10:19 AM

সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তনের জন্য সমালোচিত এরশাদ রোববার রংপুরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।

“আমার অবর্তমানে দলের হালও ধরবেন তিনি (জি এম কাদের),” বলেন ৮৫ বছর বয়সী এরশাদ। 

সংবাদ সম্মেলনে ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদের। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে দুই ভাই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন।  

সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের গড়া দল জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যানের কোনো পদ নেই। তবে এরশাদ বলেন, এখন থেকে জি এম কাদের কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী এপ্রিলে দলের যে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হবে, সেখানে কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করে তা অনুমোদন করে নেওয়া হবে।”

আগামী এপ্রিল মাসে দলের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে জি এম কাদেরকে তার প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সদস্য সচিব হিসেবেও মনোনীত করেন তিনি।

নানা নাটকীয়তার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কয়েক মাস পরই হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেন এরশাদ।

বাবলু দলীয় চেয়ারপারসন এরশাদের স্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য দুই বছর আগে ভাই জি এম কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এরশাদ দেওয়ার পর ভাইয়ের পক্ষেই ছিলেন শেখ হাসিনার গত সরকারের মন্ত্রী জি এম কাদের। অন্যদিকে ভোটে অংশ নেওয়ার পথে এগিয়ে যান নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী রওশন।

এর মধ্যে নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে এরশাদ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নেয়। এরশাদ সংসদ সদস্য হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও মনোনীত হন।

তারপর বিএনপিবিহীন সংসদে রওশন বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নিয়ে বলেন, যা কিছু ঘটেছে, এরশাদের ‘সম্মতিতেই’ হয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় এরশাদের উত্তর ছিল, ‘সময় হলে’ সব জানাবেন তিনি।         

বিরোধী দলের আসনে বসার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি সরকারেও অংশ নেয়, যাতে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে এরশাদ বলে আসছেন বিভিন্ন সময়।

বিভিন্ন বিষয়ে এরশাদের ভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রওশন সম্প্রতি বলেন, দলকে চাঙা করতে চেয়ারম্যানের অনেক কথাই বলতে হয়

দূতের পদ-মন্ত্রিত্ব ‘ছাড়তে হবে’

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছে। জাতীয় পার্টি আছে কি নেই, সেটা দেশের মানুষ জানে না। দেশের মানুষ লাঙলের (দলীয় প্রতীক) নাম ভুলতে বসেছে।

‘দলকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই’ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না, বলেন তিনি।

সঙ্কটের কারণ ব্যাখ্যা করে সম্পর্কে এরশাদ বলেন, “আমার দলের তিন এমপি মন্ত্রী হয়েছেন। আমি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা বিরোধী দলে আছি, না সরকারি দলে আছি ,সেটা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে না।

“ফলে দল চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। আমার নিজের গড়া দল ধীরে ধীর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এটা হতে পারে না। এখন দলকে শক্তিশালী করতে হলে তিন মন্ত্রী এবং আমাকে পদত্যাগ করতে হবে।”

কবে পদত্যাগ করবেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে তার বিশেষ দূত করে সম্মানিত করেছেন। আমি তাকে বলেছি, আমি এবং আমার তিন মন্ত্রী পদত্যাগ না করলে দল টিকিয়ে রাখা যাবে না।

“আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ দূত থেকে অব্যাহতি চাইব। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী আমার কথা রাখবেন। এতে দেশের গ্রামেগঞ্জে গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে পারব।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ নুর আহমেদ টুলু, রংপুর জেলা আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সদস্য সচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।