১৫ অগাস্ট কেক কাটা বন্ধ করলে সমঝোতা: কাদের

খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্টে জন্মদিন উদযাপন বন্ধ করলে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বসতে পারে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম নির্ধারক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2016, 11:39 AM
Updated : 6 Jan 2016, 11:39 AM

৫ জানুয়ারি রাজধানীর নয়া পল্টনের এক সমাবেশে বিএনপিপ্রধানের সংলাপ-সমঝোতার আহ্বানের জবাবে ওবায়দুল কাদের বুধবার এক অনুষ্ঠানে শর্ত হিসেবে এটিসহ আরও দুটি বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিএনপি এই তিন শর্ত মানলে গণতন্ত্রের স্বার্থে ‘সমঝোতা ও সংলাপের’ জন্য আওয়ামী লীগ ‘রক্তাক্ত ইতিহাসসহ অনেক কিছু ভুলতে’ পারে বলেও জানান তিনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্যের অপর দুটি শর্ত হচ্ছে- বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুরে কথা বলা বন্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মঙ্গলবার নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে অবিলম্বে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তা অনুষ্ঠানে সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। 

১৯৯৪ সাল থেকে খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্ট তার জন্মদিন উদযাপন করে আসছেন। তবে ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন কিনা- তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ তার আরও জন্ম তারিখের হদিসও পাওয়া যায়।

আওয়ামী লীগ মনে করে, ‘বিতর্কিত’ এই জন্মদিন উদযাপনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া দৃশ্যত ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ড ‘উদযাপন’ করে থাকেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে খালেদার স্বামী জিয়াউর রহমানের ইন্ধন ছিল।

বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ভুলে গেলাম রক্তাক্ত ইতিহাস; ভুলেই গেলাম ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। জাতীয় স্বার্থে সেসব ঘটনাকে আমরা সমঝোতার পথে অন্তরায় হিসেবে দেখতে চাই না।

“১৫ অগাস্টের খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন; সেটা না হয় বাদ দিলাম। ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনাকে ‘প্রাইম টার্গেট’ করে আমাদের নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিলেন- সেটাও না হয় গণতন্ত্রের স্বার্থে বাদ দিলাম। আহসানউল্লাহ মাস্টারের, এএসএম কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের রক্তাক্ত স্মৃতির কথাও না হয় ভুলে গেলাম।”

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর হোসনে পল্টু, সংসদ সদস্য ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতার শর্ত তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর দিন শেখ রাসেলেরও শাহাদাৎবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনে ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনের কেক কাটা বন্ধ করতে হবে।

“পরিষ্কার কথা, গণতন্ত্রের স্বার্থে সমঝোতা চাই। কিন্তু বিএনপিকে সমঝোতার স্বার্থে পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুরে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এই তিন বিষয়ে সমঝোতা হলে সংলাপও হবে, সমঝোতাও হবে।

“কিন্তু ১৫ অগাস্টে বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলকে হত্যার দিন কেক কেটে আনন্দ করবেন আর সেই মুখেই আবার সংলাপ-সমঝোতার কথা বলবেন, সেই সমঝোতা চাই না, বাঙালি জাতি চায় না।”

বিএনপিকে সহিংস রাজনীতি ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ভায়োলেন্স, রক্তের রাজনীতি, পেট্রোল বোমা, ককটেল সহিংসতার রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি যদি গণতন্ত্রের স্বার্থে সমঝোতা চায়, দেশের স্বার্থে সমঝোতা আমরা মানি।

“আবারও বলছি, এই তিনটি বিষয়ে আগে সমঝোতা হতে হবে, তারপর সংলাপ-সমঝোতা সবকিছুই হবে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদার দল বিএনপি ও তার শরিকরা।

ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, আর দীর্ঘদিন পর বিএনপিকে সংসদের বাইরে থাকতে হয়।

নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় এলেও কখনোই তা ফলপ্রসূ কোনো রূপ পায়নি। 

গতবছর নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এবং আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দেন।

এরপর তিনমাসে নরিজবিহীন সহিংসতা ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যার পেছনে বিএনপিকেই দায়ী করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।