নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন: এরশাদ

আসন্ন পৌরভোটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2015, 02:05 PM
Updated : 22 Dec 2015, 02:05 PM

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সমালোচনার পাশাপাশি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন ‘ঢাকার মেয়র নির্বাচনের’ মতো হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “সামনে পৌর নির্বাচন। আমি আগে বলেছিলাম, যদি এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে জনগণ আওয়ামী লীগের অতীতের সব অপকর্ম ভুলে যাবে।

“এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু যা দেখছি, তাতে আশা আছে- এমনটা বলতে পারব না।”

সিইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নাই। এ ব্যাপারে যেটুকু সন্দেহ ছিল আজ তা দৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা যেন পৌর নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেন সেজন্য একজন নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তার স্থান প্রধানমন্ত্রীর উপরে, এটা তিনি ভুলে গেছেন। তিনি তার সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।”

এবার স্বল্প সময়ে দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন করতে গিয়ে ‘চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়েছে ইসি। প্রচারের শুরু থেকেই মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গের খবরে সমালোচনা হচ্ছে নানা মহলে।

বিধিভঙ্গের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনুরোধ করছি, সরকারে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। যদিও নির্বাচন কমিশন আলাদা, তারপরও সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন করছি আমরা। তাই সরকারের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সেই কারণে যিনি সরকারপ্রধান, তাকেও বলব বিষয়টি দেখার জন্য।”

নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কায় সারা দেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের অর্ধেক ‘বসে গেছে’ জানিয়ে এরশাদ বলেন, “আমার ভয় হচ্ছে, এই নির্বাচনও মেয়র নির্বাচনের মতো হবে। সকাল ৯টার মধ্যে ভোট শেষ হবে।”

এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা জয়ী হন। নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে আসে। ভোটের শেষ দিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।

সম্মেলনে খেদ প্রকাশ করে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ বলেন, “দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি …  অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন যারা একসময় প্রতিবাদী ছিলেন, এখন আওয়াজ তোলেন না। প্রথম আলোর মতো পত্রিকা পর্যন্ত নিশ্চুপ। এই কী গণতন্ত্রের স্বরূপ?

“এই গণতন্ত্র আমি চাইনি, আমরা চাইনি। অনেক আশা নিয়ে আওয়ামী লীগকে বলেছিলাম– আপনারা তো সরকারে আছেন, দিন না একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু সেই আশা দুরাশা।”

দলের কর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “তবে আমি শেষ চেষ্টা করে যাব। আমার পাওয়ার কিছু নেই। সেনাপ্রধান ছিলাম আট বছর, প্রেসিডেন্ট ছিলাম নয় বছর। আমি আর কী চাইব?

“শুধু একটা কথা- আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে না, জন্মবার্ষিকী পালন করবে। আমি হারিয়ে যেতে চাই না।”

সম্মেলনে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেত-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।