যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজের পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, দলের কোনো বার্তা তিনি পাননি।
বিএনপি নেতার সঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের রিভিউ খারিজের পর দলটি বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছিল।
কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, মন্ত্রীর মর্যাদায় দলীয় প্রধানের সাবেক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদেরের বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতাই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চাননি।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে রিপনের কাছে সাংবাদিকদের সালাউদ্দিন কাদেরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
রিপন বলেন, “রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আমরা মনে করি, জনাব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পারসিকিউশনের শিকার হয়েছেন।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে না বলে বিএনপির অভিযোগ। সেই অবস্থান এখনও রয়েছে বলে জানান তিনি।
রিপনের অভিযোগ, সালাউদ্দিন কাদের নিজের নির্দোষিতা প্রমাণের ক্ষেত্রে সব সুযোগ পাননি।
“তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। আদালত তার উপস্থাপিত দাবিগুলো যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন, যাচাই-বাছাই করতেন, তা যদি আমলে নিতেন। তাহলে হয়ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যায়বিচার পেতে পারতেন। হয়ত তাকে ফাঁসির সম্মুখীন হতে হত না।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাহউদ্দিন কাদের দেশে ছিলেন না বলে যে দাবি করেছেন, তা বিএনপি বিশ্বাস করে কি না- সেই প্রশ্ন রাখা হয় রিপনকে।
জবাবে তিনি বলেন, “তিনি যেহেতু আমাদের পার্টির নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, অবশ্যই আমরা মনে করি, তিনি (সালাউদ্দিন কাদের) সত্য কথা বলেছেন। তার ওই বক্তব্যের সপক্ষে কিন্তু তিনি দালিলিক প্রমাণও দিয়েছেন। শুধু কথার কথা নয়, এভিডেন্সও দিয়েছিলেন।”
সালাহউদ্দিন কাদের পাকিস্তানে ছিলেন বলে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির একটি ‘সনদ’ দাখিল করেছিলেন, তবে ওই সনদ গ্রহণযোগ্য হয়নি সর্বোচ্চ আদালতের কাছে। এটি ভুয়া ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।
’৮০ দশকের ছাত্রদল নেতা রিপন বলেন, “সেই সময়কালে তিনি (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ) বাংলাদেশে ছিলেন না। একজন মানুষ যখন অপরাধ সংঘটনের সময়ে দেশে থাকেন না, তার পক্ষে সেই অপরাধটি করা বাস্তবে সম্ভব নয়। এর সপক্ষে তিনি কিছু দালিলিক প্রমাণ ও কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককে সাক্ষী মেনেছিলেন।
“আমরা খুশি হতাম, দেশবাসী খুশি হত, যদি সেই বিষয়গুলো আদালতের আমলে কিংবা বিবেচনায় নেওয়া হত।”
মুসলিম লীগ থেকে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বিএনপিতে আসা সালাউদ্দিন কাদেরের রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে রিপন বলেন, তার দলের নেতা গণতন্ত্রের প্রশ্নে ছিলেন ‘আপসহীন’।
“তিনি জাতীয় সংসদের ছয়বার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন। একজন পরিচ্ছন্ন ও সৎ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার কমিটমেন্ট ছিল।”
“কিন্তু জনাব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, অপরাধ বিবেচনাটা না নিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনাটা বোধ হয় সরকার নিয়েছে,” বলেন রিপন।
নবম সংসদে অধিবেশনে যোগ দিতে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরকে জামিন না দেওয়াও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বলে মনে করে বিএনপি।
যুদ্ধাপরাধের চূড়ান্ত রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদেরর সদস্যপদ বিএনপিতে থাকবে কি না- প্রশ্ন করা হলে রিপন বলেন, “এটা অত্যন্ত নির্মম পরিহাসের মতো শোনায়। এটার উত্তর তার প্রতি শুধু নির্মম পরিহাস।”
এসময় পাশে বসা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “সে যেখানে বেঁচেই থাকতে পারছেন না, সেখানে সদস্য পদ থাকলে কি থাকলে না, এটা কোনো প্রশ্ন হল।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী ছিলেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।