বুধবার ভোরে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে নামার পর নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে হোটেলে সোফিটেল-এ নিয়ে যান তারেক। খালেদা আপাতত এই হোটেলে উঠলেও পরে আবাস পাল্টাবেন বলে প্রবাসী বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেকের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছার আহমেদ।
বিএনপির কয়েকশ’ নেতা-কর্মী বিমানবন্দরের বাইরে উপস্থিত ছিলেন সেখানে দলীয় চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে। অন্যদিকে বিক্ষোভ জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গেলেও এবার লন্ডনেই ছেলে, পূত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন খালেদা। ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়েও থাইল্যান্ড থেকে লন্ডনে গেছেন।
বিএনপি নেতা মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সফরকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন খালেদা জিয়া, সভা করবেন দলের যুক্তরাজ্য শাখার নেতাদের সঙ্গে। ঈদের দিন কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।
এদিকে খালেদা যেখানে কর্মসূচিতে যাবেন, সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি যেখানে সভা করবেন, সেখানেই প্রতিবাদ জানাব আমরা। বিশেষ করে ব্রিটিশ সরকারের কারও কাছে তিনি তদবির করলে।”
খালেদা পৌঁছার সময় হিথরো বিমানবন্দরের বাইরে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। এ ছাড়াও ছিলেন সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, আনোয়ার-উজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়া ‘ষড়যন্ত্র’ করতেই লন্ডন যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে রওনা হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুবাইয়ে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর বুধবার সকালে লন্ডন পৌঁছান তিনি।
তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান জানান, তার নেত্রীর চোখের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও ঠিক করা হয়েছে।
২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদার এটি দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেককে দেখতে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা) হুলিয়া নিয়ে গত সাত বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।
খালেদা জিয়া গত বছর ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গেলে তারেকও লন্ডন থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর আর মা-ছেলের দেখা হয়নি। এরপর মালয়েশিয়ায় থাকা খালেদার ছোট ছেলে কোকো মারা যান।
প্রতি বছরের মতো এবারও রোজার সময় ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল খালেদার। কিন্তু ওই সফর তিনি শেষ মুহূর্তে বাতিল করেন দলের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে থাকার কথা বলে।
আর গত অগাস্টে লন্ডন যাওয়ার তোড়জোড় করেও পরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। তার না যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনারও সৃষ্টি হয়।
লন্ডন সফরের আগে গত রোববার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত করার তাগিদ দেন খালেদা।
খালেদা রওনা হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সাংগঠনিক কাজ সবাই মিলে এগিয়ে নিতে চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়ে গেছেন।