ভ্যাট নিয়ে শিক্ষার্থীদের এনবিআরের আশ্বাসে ফাঁকি আছে: বিএনপি

ভ্যাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া এনবিআরের আশ্বাসে ফাঁকি দেখছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2015, 02:23 PM
Updated : 10 Sept 2015, 02:35 PM

তারা বলেছে, শিক্ষার্থী কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারও কাছ থেকেই ভ্যাট নেওয়া যাবে না।

বেসরকারি উচ্চ শিক্ষায় টিউশন ফির সঙ্গে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার কয়েকটি স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে তীব্র যানজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেছে, আরোপিত ভ্যাট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে না, তা দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

দিনভর আলোচিত এই বিষয়ে বিকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান জানান বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “এনবিআরের বক্তব্য শুভঙ্করের ফাঁকি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশমিত করতেই তারা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছে।

“প্রতিষ্ঠান যখন ভ্যাট দেবে, তখন তারা অন্য জায়গা থেকে অর্থ আনবে না। প্রতিষ্ঠান এই ৭ ভাগ ভ্যাট আদায় করার জন্য প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীদের বেতনটা বাড়িয়ে দেবে; সেমিস্টার, ল্যাবরেটরি ফিসহ অন্যান্য ফি বাড়িয়ে দেবে।’’

এনবিআর অবশ্য বলেছে, বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকায় টিউশন ফি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।

“আমাদের দলের তরফ থেকে সুস্পষ্টভাষায় দাবি করতে চাই, ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয়ও দেবে না, শিক্ষার্থীরাও দেবে না। এটা (ভ্যাট) তাদের ওপর আরোপ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট থাকতে পারে না, এটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়,” বলেন সাবেক ছাত্রনেতা রিপন।

অষ্টম বেতন স্কেল প্রসঙ্গে

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টিতে বিএনপি সমর্থন জানালেও বাজারে তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে দলটির।  

রিপন বলেন, “বাজারের বাস্তবতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের দল সমর্থন করে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছ জীবনযাত্রার জন্য বাজার উপযোগী বেতন থাকা উচিৎ। তাতে মেধাবীদের সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ গড়ে উঠবে।”

তবে তিনি একইসঙ্গে বলেন, “২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অষ্টম পে-স্কেল মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ঘর ভাড়া বাড়বে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বাসভাড়া-রিকসা ভাড়াসহ সব কিছুরই ব্যয় বাড়বে।

“অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও নানাভাবে ৫ কোটি মানুষ সংশ্লিষ্ট। তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সরকারের হাতে না থাকলেও বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা বাজারের উত্তাপ ও মূলবৃদ্ধিসহ সব কিছুর চাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবেন না।”

অষ্টম পে-স্কেলে নানা ক্যাডারদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের যে অভিযোগ উঠেছে, তা বিবেচনা করতে সরকারকে আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।

“আমরা দাবি করছি, পূর্বের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডও যেন পুনর্বহাল করা হয়। সব স্তরের কর্মকর্তারা যাতে আর্থিকভাবে ও মর্যাদাগতভাবে বঞ্চনাবোধ না করেন, সে বিষয়টিও সরকারকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।”

শিক্ষকদের দাবি সমর্থন

অষ্টম বেতন কাঠামোয় আপত্তি জানিয়ে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবিতে সমর্থন জানিয়ে বিএনপি নেতা রিপন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।

“শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সম্মানজনক না হওয়ায় প্রকৃত মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যারা আছেন, তারা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নানাভাবে লড়াই করছেন। বিএনপি বেতন-ভাতা ও মর্যাদার প্রশ্নে শিক্ষকদের দাবির সাথে সহমত পোষণ করে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যকে ‘শিষ্ঠাচারবহির্ভূত’ আখ্যায়িত করে এর নিন্দাও জানান রিপন।

তিনি বলেন, “শিক্ষকদের যাতে কর্মবিরতি পালন করতে না হয়, ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে না হয়, সেজন্য সরকার তাদের দাবি মেনে নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।”