হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আকস্মিকভাবে সংসদে গিয়ে ১৫ মিনিটের আবেগময় এক বক্তৃতা দিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
Published : 01 Sep 2015, 07:26 PM
হজ নিয়ে বক্তব্য: তোপের মুখে লতিফ সিদ্দিকী
মন্ত্রিত্ব-দলীয় পদ সবই খোয়ালেন লতিফ সিদ্দিকী
জটিলতার মধ্যে নিজেই সংসদ সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে যান টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য।
স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বক্তৃতা দেন তিনি, যাতে হজ নিয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। শেষ পর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
সংসদ অধিবেশন কক্ষ থেকে পদত্যাগপত্রটি সংসদের কর্মীদের মাধ্যমে স্পিকারের কাছে পাঠান লতিফ সিদ্দিকী। পদত্যাগপত্রটি অধিবেশনে পড়বেন কি না- জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, তার প্রয়োজন নেই।
বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংসদ সদস্যপদ ছাড়লেন তিনি।
“আজ আমার সমাপ্তি দিন। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জানাচ্ছি না, নত মস্তকে ক্ষমা চাচ্ছি সবার কাছে। আমি মানুষের ভালোবাসায় বিশ্বাস করি। ...আমার নেত্রীর অভিপ্রায়, আমি সংসদ সদস্য না থাকি।”
“অনুমিত হয়েছে, আমার নেতার অভিপ্রায়, আমি আর সংসদ সদস্য না থাকি। কর্মী হিসাবে নিয়ত নেতার একান্ত অনুগত ছিলাম। বহিষ্কৃত হওয়ার পর এর ব্যত্যয় কিংবা ব্যতিক্রম সমীচীন মনে করি না। …হৃষ্টচিত্তে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আসন ১৩৩, টাঙ্গাইল-৪ সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”
৭টা ২৪ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ৭টা ৩৯ মিনিটে শেষ করেন ৭৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। এসময় অধিবেশন কক্ষে ছিল পিনপতন নীরবতা।
“আমি মুসলমান, আমি বাঙালি, আমি আওয়ামী লীগার-এ পরিচয় মুছে দেওয়ার মতো কোনো শক্তি পৃথিবীর কারও নেই- কারণ এ আমার চেতনা, আমার জীবনবেদ, প্রাণের রসদ, চলার সুনির্দিষ্ট পথ”- এই বলে বক্তৃতা শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক লতিফ সিদ্দিকী।
এসময় কয়েকজন সংসদ সদস্য টেবিল চাপড়ান। এর মধ্যে শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুও ছিলেন। আমু টেবিল চাপড়ানোর সময় তার হাত চেপে ধরতে দেখা যায় পাশের আসনে বসা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে।
বক্তব্য শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় লতিফ সিদ্দিকী সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলসহ কয়েকজনের সঙ্গে করমর্দন করেন।
মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন কক্ষে ঢুকে সামনের সারিতে নিজের আসনে বসেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন না অধিবেশন কক্ষে।
লতিফ সিদ্দিকী ঢোকার সময় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছিলেন।
প্রথমে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়ানোর জন্য স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সাড়া পাননি লতিফ সিদ্দিকী। স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, “মাননীয় সদস্য, আপনি একটু পরে কথা বলেন।”
এর কিছুক্ষণ পর স্পিকারের সায় নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
অধিবেশন কক্ষে ঢোকার আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে শিরীন শারমিনের সঙ্গে দেখা করেন লতিফ সিদ্দিকী।
লতিফ সিদ্দিকী অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন কি না- তখন জানতে চাইলে শিরীন শারমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন যেতে পারবেন না? উনি তো এমপি।”
লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে গৃহীত হলে টাঙ্গাইল-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে।
টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের বড় ভাই লতিফ ওই আসন থেকে একাধিক বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীও একবার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকীও সাবেক সংসদ সদস্য; যিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে এখন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ গঠন করে সে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্রটি বিধিসম্মত হলে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৮ (৩) অনুযায়ী বিষয়টি চলতি অধিবেশনেই সংসদকে জানাবেন স্পিকার।
আসন শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।
অবশ্য আগামী ৬ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে বিতর্ক নিষ্পত্তির শুনানি রয়েছে। তার আগেই নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিলেন তিনি।
‘হজ আর্থনীতিক ক্রিয়াকাণ্ড, মিথ্যে নয়’
নিউ ইয়র্কে যে বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ, তা থেকে যে লতিফ সিদ্দিকী নড়েননি, সংসদে বক্তব্যই তার প্রমাণ।
নিজেকে মুসলমান হিসেবে তুলে ধরেই তিনি বলেন, “আমি মনে করি হজ প্রতিপালন ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে অন্যতম ফরজ। এই ফরজ পালনেও আরও কতকগুলো অবশ্যপালনীয় ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালন করে মাত্র একবারই করার কথা, যা আমি নিজেও করেছি।...যারা এই ফরজটি পালনে প্রতিবছর ব্যস্ত তাদের মানসিকতা আর আমার বিবেচনা ভিন্ন।
“হজ যে একটা বিরাট আর্থনীতিক ক্রিয়াকাণ্ড, তা কিন্তু মানতে না চাইলেও মিথ্যে হয়ে যায় না। রোজার মাসটি আমার প্রাত্যহিক জীবনে খুবই স্মরণীয় ও অবশ্যপালনীয় মাস। সম্পূর্ণ পবিত্রতার সঙ্গেই আমি এই ধর্মীয় আচারটি পালন করি।”
মহানবী (সা.)কে কটাক্ষ করার অভিযোগও উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এই নেতা।
“নবী করিম (সা.) কখনও জীবনকে অস্বীকার করে ধর্মপালন করতে বলেননি। জীবনের জন্য ধর্ম অপরিহার্য। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বিদায় হজের বাণীতে মহানবী নিষেধ করেছেন, যারা অসাম্প্রদায়িক ইহজাগতিকতার কথা প্রচার করেও ধর্মানুভূতি নিয়ে শোরগোল তোলেন তাদের বিষয়ে নীরব থাকাই সমীচীন মনে করি।”
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমার এই মনোভঙ্গির ও ভাবজগতের প্রকাশ ও প্রচার নিয়ে যত ষড়যন্ত্রই হোক, যত মিথ্যাচার হোক, যত আঘাত-প্রতিঘাত আসুক, রাজনৈতিক সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্থা রেখে যেমন মোকাবেলা করেছি, বর্তমানেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। তবে এখন আমি নেতাহীন কি না, সেই বিষয়ে সন্দিহান।”
দল থেকে অতীতে দুবার বহিষ্কার হওয়ার কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন তিনি।
“দলীয় কর্মকাণ্ড ও দুর্বল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি বলে (বহিষ্কার হয়েছি)। এবারও ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ইহজাগতিক মনোভাব প্রকাশের কারণেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ, প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হরণ করা হয়েছে।”
বিতর্কের শুরু
২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালেও মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে ক্ষমতাসীন দলে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্টভাষী ও আত্মম্ভরী হিসেবে পরিচিত লতিফ সিদ্দিকী।
গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাত দুটোর ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশের পর শোরগোল ওঠে। তাকে গ্রেপ্তার এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলে কট্টর ইসলামী বিভিন্ন সংগঠন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্য থেকে একই দাবি উঠে।
তখন প্রধানমন্ত্রীও নিউ ইয়র্কে ছিলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে।
বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে অক্টোবরেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেন শেখ হাসিনা। একই মাসে তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
দেশে ফিরে কারাগারে
দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পর লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার মধ্যেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মামলা হতে থাকে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশে ফেরেন তিনি। সবার চোখ এড়িয়ে চলে যান বাসায়।
দুদিন পর নিজেই ধানমণ্ডি থানায় গিয়ে ধরা দেন লতিফ সিদ্দিকী। পুলিশ আদালতে নিয়ে গেলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
বিভিন্ন মামলায় নয় মাস কারাবাসের পর এই বছরের ২৯ জুন জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে কারাগারে থাকার সময়টাতে অধিকাংশ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি।
সংসদ সদস্যপদ নিয়ে জটিলতা
দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্যপদ থাকা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।
বহিষ্কারের আট মাস পর বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি গত ৫ জুলাই স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে পৌঁছায়।
এরপর সংবিধান, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট, সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে বিতর্ক নিষ্পত্তির কার্যক্রম নেওয়া হয়।
এ অবস্থায় লতিফের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, তা মীমাংসার জন্য গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে মেম্বার অব পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও লতিফ সিদ্দিকীকে লিখিত বক্তব্য দিতে বলে ইসি।
লিখিত বক্তব্য পাওয়ার পর গত ২৩ অগাস্ট শুনানিতে হাজির হয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে আর শুনানি করার দরকার নেই।”
নির্বাচন কমিশনে সংসদ সদস্য পদ বিতর্ক নিষ্পত্তির বিষয়ে স্পিকারের চিঠি পাঠানোর নিয়ে প্রশ্ন লতিফ সিদ্দিকীর, যা সংসদে বক্তব্যে তিনি তুলে ধরেন।
তার আপত্তি হল সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে স্পিকারের চিঠিটি নিয়ে। ৬৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও থাকা বিষয়ক।
“এই স্পষ্ট বিষয়টি মাননীয় স্পিকারের চিঠিতে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন ও সংবিধানের অপব্যাখ্যা হয়েছে। মাননীয় স্পিকার বিনা শুনানিতে এভাবে সংসদ সদস্যের আসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া যথাযথ কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
স্পিকারের কাছে লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর ইসির করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, তারা বুধবার বসে এ নিয়ে আলোচনা করবেন।
আলোচনায় আগেও
টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭৭ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী রাজনীতিতে স্পষ্টভাষী হিসেবে যেমন পরিচিত, তেমনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তীর্যক বক্তব্য দিয়ে এর আগেও আলোচনায় এসেছেন তিনি।
নিজের ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর ‘হঠাৎ জামায়াত ঘনিষ্ঠতাকে’ যেমন তিনি ‘বীর উত্তমের রাজাকার হওয়ার শখ’ বলে সমালোচনা করেছেন, তেমনি বাড়িতে ডেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলীকে পেটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসন থেকে পাঁচবার সংসদে যাওয়া লতিফ সিদ্দিকী গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
তবে এই লতিফ সিদ্দিকীই ১৯৮০ এর দশকে প্রবাসে থেকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, আবার ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন।
ষাটের দশকে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দিনগুলোতে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য লতিফ সিদ্দিকীকে।
ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ১৯৬৪-৬৫ সালে করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ’৬৬ এর ছয় দফা ও ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় এই নেতা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসাবে ভূমিকা রাখেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীকে প্রায় ছয় বছর কারাগারে কাটাতে হয়। এরশাদের আমলে স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী নারী সাংসদ হওয়ার পর মুক্তি পান তিনি।
গত সরকারের শুরুর দিকে এক অধিবেশনে সংসদের প্রথম সারিতে মন্ত্রী ও সরকারি দলের সাংসদের অনুপস্থিতি দেখে তখনকার স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করলে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই তার জবাব দেন লতিফ।
সংসদে তিনি বলেন, “স্পিকার হচ্ছেন সংসদের সেবক। তিনি প্রভু নন। কোনো সাংসদের পয়েন্ট অফ অর্ডারেই শুধু রুলিং দিতে পারেন স্পিকার।”
২০১১ সালে পাট নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘যথাযথ মর্যাদা’ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতেই আয়োজকদের তুলোধুনা করেন তখনকার পাটমন্ত্রী লতিফ।
বাংলাদেশে সব পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যেই গত বছর রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে একটি চিঠি লেখেন তখনকার বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, যে চিঠির শিরোনাম ছিল ‘ট্রেড ইউনিয়ন প্রশ্নে আপনি বলার কে?’