আর শান্ত থাকার পরিস্থিতি নেই: সুরঞ্জিত

সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, এসব ঘটনার পর কোনো বিবেকবান মানুষের আর শান্ত হয়ে থাকার সুযোগ নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 10:10 AM
Updated : 18 August 2015, 06:53 PM

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে মঙ্গলবার তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “অঙ্গ হারানো একজন মানুষকে হাতকড়া দিয়ে নিয়ে যাওয়া, তার ছবি প্রকাশ করা, এতো তড়িঘড়ি করে তাকে রিমান্ডে নেওয়া স্বাভাবিক মনে হয়নি।

“তাকে হাতকড়া পরিয়ে রাতের আঁধারেই ফরিদপুর নিয়ে যেতে হল? এতো এফিশিয়েন্ট হয়ে গেল পুলিশ, ডিবি?”

এসব ঘটনার পর কোনো বিবেকবান মানুষের আর শান্ত হয়ে থাকার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত।

“সাংবাদিক, সাংবাদিকতা একটি প্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের এভাবে দাঁড়ানো উচিত নয়।”

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল (ফাইল ছবি)

রোববার রাতে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফেইসবুকে লিখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দাবি করেছেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্যের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কারও কণ্ঠ রোধ করার জন্য, গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশ করার জন্য কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করার কারণে আমরা কাউকে ধরিনি। এক ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

হাসানুল হক ইনু (ফাইল ছবি)

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, “সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এর আগেও কয়েক বছর আগে তিনি এ ধরনের বিপদে পড়ছিলেন। তখন আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সহায়তার চেষ্টা করেছি।

“এখন তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে আমি মনে করি। তিনি যাতে নিশ্চিতভাবে আইনি সুরক্ষা পান, সেজন্য তথ্যমন্ত্রণালয় কাজ করবে।”

সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সরব ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো নিন্দা ও সমালোচনা করলেও এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী এই বাম নেতার কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এই ব্যাপারে কিছুই বলব না।”

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

প্রবীর সিকদার (ফাইল ছবি)

প্রবীর সিকদারের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আগেও দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়েছি। এখনও বলছি, তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হউক।”

অবিলম্বে তার মুক্তি চেয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিও।

সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, সহ সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহ সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, চলচ্চিত্রনির্মাতা শামীম আখতার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার একজন বিতর্কিত মন্ত্রীর সমালোচনার জন্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান সাংবাদিক প্রবীরকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষকে তা ক্ষুব্ধ করবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “প্রবীর সিকদার যদি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনও অপরাধ করে থাকেন, তার জন্য মামলা হতে পারে। যে বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন সে বিষয়ে তদন্ত করা উচিৎ।

“কারা কোন উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছে সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এহেন অপব্যবহার এ ক্ষেত্রে সরকারের অর্জনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”