প্রথম প্রহরে কেক কাটছেন না খালেদা?

রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে জাতীয় শোক দিবসের প্রথম প্রহরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা এবার থাকছে না বলে আভাস মিলেছে।  

সুমন মাহমুদ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2015, 02:01 PM
Updated : 14 August 2016, 09:56 AM

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। নিজের বাসা ফিরোজায় সাধারণত তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ দেন না। শুক্রবার রাত ১২টার পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়েও কোনো কর্মসূচি নেই।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, মহিলাদল ও ছাত্রদলও রাতে কোনো কর্মসূচি রাখেনি। তবে শনিবার দোয়া মাহফিল ও কেক কাটার প্রস্তুতি রয়েছে বলে নেতাদের কথায় জানা গেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার এই দিনে জন্মদিন উদযাপন না করতে খালেদার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। তারপরও গত দুই দশক ধরে ১৫ অগাস্টের প্রথম প্রহরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কেটে নিজের জন্মদিন উদযাপন করে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স হচ্ছে ৭০ বছর। যদিও তার একাধিক জন্মদিন ও জন্মসালের হদিস পাওয়া যায়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছুটির দিনে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আসেন না। আজ শুক্রবার তিনি কার্যালয়ে আসবেন না।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, শনিবার প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জন্মদিন উদযাপনের কোনো কর্মসূচি নেই।

তবে বোধগম্য কারণেই দলের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা খালেদার জন্মদিনের কর্মসূচি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি দয়া করে ১৫ অগাস্ট আপনার জন্মদিন পালন না করে ১৬ বা ১৭ তারিখ করেন। আপনি তো ইচ্ছা করে ১৫ তারিখ জন্মদিন পালন করেন। ১৫ তারিখ তো আপনার জন্মদিন না।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেছিলেন, “বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। তার নেতা-কর্মী-সমর্থক-ভক্ত রয়েছে। এটা তাদের অনুভূতির ব্যাপার। বেগম জিয়া নিজে থেকে কখনও জন্মদিন পালন করেন না।”

আশরাফের উদ্দেশে রিপন বলেন, “জন্মদিন পালন করার বিষয়টি একান্তই একজনের ব্যক্তিগত বিষয়। এই সিদ্ধান্ত আপনি দিতে পারেন না, আপনি চাপিয়ে দিতে পারেন না- আপনি এটা (জন্মদিন) পালন করতে পারবেন কি পারবেন না।”

খালেদা জিয়ার ১৫ অগাস্টের জন্মদিনকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বলেছেন, এমন দিনে জন্মদিন পালন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন সরে আসবেন বলে তিনি আশা করছেন।

শুক্রবার দুপুরেও এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামের কথায় শোক দিবসে খালেদার জন্মদিন পালন প্রসঙ্গ আসে।  

কামরুল বলেন, “শোক দিবসে প্রতিবছর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন করেন। আশা করছি এই ভুয়া জন্মদিন পালনের জন্য তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন, আর সেই অপেক্ষায় আমরা আছি।” 

যুবদল, মহিলাদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবার প্রথম প্রহরে কোনো কর্মসূচি রাখেননি। শনিবার দোয়া মাহফিল ও কেক কেটে ‘ম্যাডামের’ জন্মদিন উদযাপন করবেন।

যুবদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু ম্যাডাম আজ গুলশানের অফিসে আসবেন না, সেজন্য আমরাও কর্মসূচি রাখিনি। কাল ম্যাডাম অফিসে এলে আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাব।”

ছাত্রদলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতাও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একই ধরনের কথা বলেছেন।

বরাবর ১৫ অগাস্ট প্রথম প্রহরে নিজের কার্যালয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে( ২০১৪ সালের ছবি)

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে বলে তার নতুন করা পাসপোর্টে থাকলেও বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায় গতবছর এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপি প্রধানের জন্ম ১৯৪৫ সালে।

বাংলা পিডিয়াসহ খালেদা জিয়ার জীবনীর ওপর রচিত কয়েকটি বইয়েও তার জন্ম বছর ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেখানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও তিনি দিনাজপুরে ঠিকানা নেন। খালেদা জিয়ার জন্মও সেখানে। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।

১৯৬০ সালের অগাস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় খালেদার। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নানা পটপরিবর্তনে জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের দিকে চালিত করার যে চেষ্টা করা হয়, বিতর্কিত জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে কার্যত তা-ই উদযাপন করেন খালেদা।

১৯৮১ সালে ৩০ মে স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন হন তিনি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোটের নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, খালেদাই ‘ক্যান্টনমেন্টে’ জন্ম নেয়া দল বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন।

১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বিএনপি গতবছর ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে খালেদার দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারায়। সেই সঙ্গে দুই যুগ পর রাষ্ট্রীয় প্রটোকল হারান তিনি।