টিকে থাকার পুরস্কার পাচ্ছেন এরশাদ

সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি, গণআন্দোলনে পতনের পরেও কারাবন্দি অবস্থায় ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ, পরবর্তীতে দেশের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই টিকে থাকা নজর কেড়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার।

নিজস্ব প্রতিবেদকনিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2015, 04:20 PM
Updated : 30 July 2015, 07:29 PM

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’ এ বছর তাদের গ্লোবাল অফিসিয়ালস অব ডিগনিটি (গড) অ্যাওয়ার্ডস-এর জন্য বিভিন্ন দেশের ২৪ জনের সঙ্গে এরশাদকে বেছে নিয়েছে।

লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ইউনিভার্সাল কারেজ অ্যান্ড হিরোইজম ক্যাটাগরিতে এবার এরশাদকে দেওয়া হচ্ছে এ সম্মাননা।

আগামী ৫ থেকে ৭ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে এ সম্মাননা দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলেসভিত্তিক সংস্থাটির অনুষ্ঠানটি হবে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। এটি হবে গড আওয়ার্ডস এর তৃতীয় আসর।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই পুরস্কার নিতে আগামী ২ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে তার রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে আগামী ৭ অগাস্ট দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে দলের চেয়ারম্যানের।

“আমরা আগেই শুনেছিলাম, স্যার পুরস্কার পাচ্ছেন। কনফার্ম হওয়ার জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করেছি। জাতীয় পার্টি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। স্যারের পুরস্কার তারই স্বীকৃতি।”

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রায় এক দশক শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে পতন ঘটেছিল এরশাদের। এই সামরিক একনায়ককে হটানোর আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন অনেকে।

ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ।

এরপর বেরিয়ে এসে নানা বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনার মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এখনও কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। 

‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’র তালিকায় এরশাদ ছাড়াও ‘নেপাল হিউম্যানিটেরিয়ন অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে সাবেক বলিউড তারকা মনীষা কৈরালা, ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ফ্রিডম, জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ এ জাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুন্ডা, ‘এশিয়াস ডিগনিটি ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ এ নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিল রাজ রেগমি, ‘সুপ্রিম স্পিরিচুয়াল আইকন অফ পিস’ এ ভারতের যোগগুরু রবি শংকরসহ বিভিন্ন দেশের ২৫ জন এ বছর এই পুরস্কার পাচ্ছেন।

কূটনীতি, ব্যবসা, সেবা, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার, বিশ্ব শান্তি, নিরাপদ পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ক্ষমতায়নে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারীদের এ সম্মাননা দেওয়া হয় বলে গড আওয়ার্ডস-এর আয়োজকরা জানিয়েছেন।

এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’র বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিলের একটি বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় বলে জানান তারা।

এবারের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের তিন দিনের জন্য মাথাপিছু দুই হাজার ডলার করে দিতে হবে। আর শুধু পুরস্কার বিতরণের দিন উপস্থিত হলে দিতে হবে এক হাজার ডলার করে।

এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে এ পুরস্কারকে ‘জাতিসংঘের পুরস্কার’ বলা হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো সম্পর্ক নেই। ত্রিনিদাদ মিশন এ আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে।

মহাসচিব বান-কি মুনকে পুরস্কার বিতরণের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি থাকছেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি সচিবালয়। তবে ৭ অগাস্ট সন্ধ্যায় মহাসচিব নিউ ইয়র্কে থাকলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে এ মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমিও অংশ নিতে পারব না। কারণ, এক হাজার ডলার ফি প্রদানের অনুমতি এখনও পাইনি।”