মিয়ানমারে ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা গণতন্ত্রপন্থি নেতাদের বাঁচানোর আকুতি

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের আদেশে ফাঁসি হতে যাওয়া সুপরিচিত গণতন্ত্রপন্থি কেয়াও মিন উ-র স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামী স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে জীবনভর যে বিশ্বাসগুলোকে আগলে রেখেছেন, নিজের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে বিশ্বাসগুলোও নিয়ে যাবেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2022, 10:02 AM
Updated : 18 June 2022, 10:04 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জিমি নামে পরিচিত কেয়াও মিন উ এবং সাবেক আইনপ্রণেতা ও হিপ-হপ শিল্পী ফিও জেয়া থ-র ফাঁসি হলে, তারাই হবেন ১৯৮৮ সালের পর দেশটিতে বিচারের মাধ্যমে প্রাণদণ্ড পাওয়া প্রথম কেউ।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত মিলিশিয়াদের সহায়তায় অভিযুক্ত এ দুজনকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদের দায়ে জানুয়ারিতে সামরিক আদালতে এক রুদ্ধদ্বার বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।  

গত বছর ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো সেনাবাহিনীর সঙ্গে এখন দেশটির সশস্ত্র অনেক গোষ্ঠীর লড়াই চলছে।

তাদের কখন ফাঁসিতে ঝোলানো হবে সামরিক বাহিনী তা না জানালেও এই মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।

বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে কেয়াও মিন উ এবং ফিও জেয়া থ’কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের দুই বিশেষজ্ঞ একে ‘মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করার অপচেষ্টা’বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। 

কেয়াও মিন উ’র স্ত্রী নিলার থেইন বলছেন, সামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তায় করতে অস্বীকৃতি জানালে কী পরিণতি হতে পারে তার স্বামীকে সেটার উদাহরণ বানানো হচ্ছে। মিয়ানমারের আগের সামরিক শাসনামলেও কেয়াও মিন উ ১৮ বছর রাজবন্দি ছিলেন। 

“তিনি কোনোকিছুর সঙ্গেই তার রাজনৈতিক বিশ্বাসকে বদলাবেন না। তিনি তার বিশ্বাসের পক্ষেই থাকবেন। কো জিমি (কেয়াও মিন উ) আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন,” লুকিয়ে থাকা স্থান থেকে ফোনে রয়টার্সকে বলেন নিলার থেইন।

৫৩ বছর বয়সী কেয়াও মিন উ এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির ঘনিষ্ঠ মিত্র ৪১ বছর বয়সী ফিও জেয়া থ তাদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও চলতি মাসের শুরুতে সেগুলো খারিজ হয় যায়।

বিচারে তারা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন না করেন নি, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। ‘গণপ্রতিরোধ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত জান্তাবিরোধী প্রতিরোধে আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততার মাত্রা কেমন ছিল তাও জানা যায়নি।

কেয়াও মিন উ এই সশস্ত্র প্রতিরোধে সম্পৃক্ত ছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তার স্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনী তার স্বামীকে যেভাবে চিত্রায়িত করছে, তা মেনে নিচ্ছেন না তিনি।

কিন্তু সমগ্র দেশিই এখন জেনারেলদের ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সম্পৃক্ত, বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশের সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো কেয়াও মিন উ এবং ফিও জেয়া থ’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার তথ্য নথিভুক্ত করেছে তারা। ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যেই গোপন বিচারের মাধ্যমে ‘বজ্রগতিতে দণ্ড’ দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছে তারা।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়র দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সভাপতি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন প্রতিবেশীদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে মিয়ানমারের জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইকে চিঠি দিয়ে ওই দুইজনের ফাঁসি কার্যকর না করার অনুরোধও জানিয়েছেন।

এসবের পরও ফাঁসি কার্যকরে পেছপা না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা। পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনাকে ‘বেপরোয়া ও হস্তক্ষেপ’ বলেও অভিহিত করেছে তারা।

বৃহস্পতিবার জান্তার মুখপাত্র জ মিন তুন।বলেছেন, ওই দুইজনের যে রায় হয়েছে, তা যথাযথ।

“প্রয়োজনীয় মুহূর্তে প্রয়োজনীয় কাজ করাই দরকার,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।

ফিও জেয়া থ’র স্ত্রী থাজিন নিউন্ত অং বলেছেন, গত বছর কয়েক মাস ধরে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি চালানো যুবকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এই দুজন সামরিক বাহিনীর ‘টার্গেটে’ পরিণত হন।

ফাঁসি বন্ধে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার অনুরোধও করেছেন থাজিন।

“জান্তা বিপ্লবকে নিঃশেষ করে দিতে চাইছে। নিজেদের ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই, এই মানসিকতা নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। এখন আমরা বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে কি নেই, এই প্রশ্ন করা শুরু করেছি,” অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে বলেছেন তিনি।