সোমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তারা বলেছেন, ১৯ শতকের তুলনায় এখন এ ধরনের তাপদাহের সম্ভাবনা অন্তত ৩০ গুণ বেড়েছে, কারণ পৃথিবীকে উষ্ণ করে এমন গ্যাসের নিঃসরণ আগের তুলনায় আরও বিস্তৃত হয়েছে।
“তাপদাহের বেলায় জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিকারের গেইম চেঞ্জার। সত্যিই এটা বড় বিষয়,” বলেছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রিডেরিক ওটো।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে অসংখ্য বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের তাপদাহ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনের একজন লেখক।
গবেষণাটি বলছে, এখন কোনো বছরে এ ধরনের তাপদাহের সম্ভাবনা ১০০ বারে একবারে এসে পৌঁছেছে, অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির আগে এ ধরনের তাপদাহের সম্ভাবনা ছিল অন্তত ৩ হাজার বারে একবার।
তাপমাত্রা যদি প্রাকশিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তাহলে বছরে এ ধরনের তাপদাহের সম্ভাবনা ভয়াবহ রকম বেড়ে ৫ বারে একবারে পৌঁছে যাবে। পৃথিবী ওই পথেই রয়েছে, যদি বিভিন্ন দেশ উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত গ্যাসের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় না কমায়।
বিশ্ব এরই মধ্যে ১৯ শতকের শেষ দিকের তুলনায় ১ দশমিক ১ ডিগ্র সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হয়ে পড়েছে।
বছরের এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় গরম অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এবার তাপদাহ তুলনামূলক আগে, মার্চের শুরুর কাছাকাছি সময় থেকে শুরু হয়ে অনেক এলাকায় এখনও চলছে; কয়েক মাসের মধ্যে, বর্ষা না আসা পর্যন্ত এ থেকে স্বস্তি মেলার সম্ভাবনা কম।
বিজ্ঞানীরা মার্চ ও এপ্রিলের প্রতিদিনকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন এবং এখনকার বিশ্ব এবং বিপজ্জনক গ্যাস নিঃসরণ ও উষ্ণায়ন নেই এমন কাল্পনিক এক বিশ্বের মডেলের তুলনা করেছেন।
তাদের পর্যালোচনায় দীর্ঘ তাপপ্রবাহের প্রভাবও খতিয়ে দেখা হয়েছে। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী অর্পিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, তীব্র গরমের কারণে গমের ওপর প্রভাব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা বেশ জটিল, যদিও যাচাই করা হয়নি এমন অনেক জায়গা থেকে ফসলটির ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
“আশঙ্কার বিষয় হল, ভারত বাকি বিশ্বে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে; অথচ আমাদেরই যে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে,” বলেছেন তিনি।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের পাশাপাশি ভারতের এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের জলবায়ু ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক রূপ সিং বলছেন, অন্য তাপদাহগুলোর মতো ভারত-পাকিস্তানজুড়ে হওয়া এবারে তাপদাহেও দরিদ্ররাই যে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের তথ্য পাওয়া গেছে; এর একটা কারণ, সিস্টেমে অনেক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র যুক্ত হয়েছে, আরেকটা কারণ হচ্ছে ভারতজুড়ে কয়লার ঘাটতি।
গবেষণায় প্রাপ্ত এসব ফলের সঙ্গে গত গ্রীষ্মে উত্তরপশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও পশ্চিম কানাডায় অস্বাভাবিক তাপদাহসহ দুই দশকে হওয়া অসংখ্য তাপদাহ সংক্রান্ত বিশ্লেষণের সামঞ্জস্য আছে।
অ্যাট্রিবিউশন অ্যানালাইসিস নামে পরিচিত গবেষণার এই ক্ষেত্রটি বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষতি যে বহু দূরের সমস্যা নয়, বরং এর কারণে যে এখনই সমস্যা হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ সংক্রান্ত বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করছে।