আবার বসেছে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট

গত সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং দেশের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করার পর প্রথমবার বসেছে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2022, 09:45 AM
Updated : 17 May 2022, 09:45 AM

ঘটনাবহুল অনেকগুলো দিন পেরিয়ে মঙ্গলবার আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টের অধিবেশনে মিলিত হন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর আগের দিন সোমবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে দ্বীপদেশটির জনগণকে ‘অপ্রীতিকর ও ভয়াবহ পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

“এ্ই মুহূর্তে একদিন চলার মতো পেট্রল মজুদ আছে আমাদের। আগামী কয়েক মাস হতে যাচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন মাস,” বলেছিলেন তিনি।

রনিল বলেন, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৯ সালের নভেম্বরেও ছিল ৭৫০ কোটি ডলার, এখন তা নেমে শূন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে; অর্থনীতি সচল রাখতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার দরকার। জরুরি সব ওষুধও শেষ হয়ে গেছে।  

জ্বালানির অভাবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে দিনে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি। দেশটিকে জ্বালানির প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়।

“যে কঠিন সময় পার করেছি আমরা, সামনের অল্প কিছু সময় তারচেয়েও কঠিন সময় পাড়ি দিতে হবে আমাদের,” বলেছেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে শ্রীলঙ্কায় মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হলেও সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সমর্থকরা কলম্বোর একটি বিক্ষোভকেন্দ্রে হামলা চালালে পরিস্থিতি বদলে যায়।

এরপর সরকার সমর্থক ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ৯ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়, আহত করে ৩০০র বেশি মানুষকে।

মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হয়, তবে তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায় রাজাপাকসে এখনও স্বপদে বহাল।

ছবি রয়টার্সের

দেশের এই অবস্থার জন্য শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ নাগরিক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী মনে করছেন। তারা গোটাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে রনিলকে প্রধানমন্ত্রী করে নিয়ে আসেন গোটাবায়া। এর আগে আরো কয়েকবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে রনিলের। যদিও কোনোবারই তিনি মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

কোভিড মহামারীতে পর্যটন খাত থেকে আয় শূ্ন্যে নেমে যাওয়া, ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং জনগণের মন জয় করতে রাজাপাকসে সরকারের কর কর্তন শ্রীলঙ্কার আজকের পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী বলা হচ্ছে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর দেশটিকে এত মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে আগে কখনো পড়তে হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকায় দেশটি জ্বালানি ও ওষুধসহ অতি জরুরি নিত্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না। তার উপর আছে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা।

রনিল দেশকে এ সংকট থেকে বের করে নিয়ে আসবেন- বিক্ষোভকারীদের সে আস্থাও নেই। তারা উল্টো নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ভাঁড় বলছেন।

রনিলের নিয়োগ করা মন্ত্রীদের নিয়েও তাদের আপত্তি আছে। কারণ, এখন পর্যন্ত নতুন প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া চারজনই রাজাপাকসে ভাইদের দলের এমপি।

এ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ এখনও খালি। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে অর্থমন্ত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করে বেল আউট সুবিধা পাইয়ে দিতে সক্ষম হবেন।

আগের অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি এ ব্যাপারে আইএমএফের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করলেও মাহিন্দার সঙ্গে গত সপ্তাহে তিনিও পদত্যাগ করেন।