দাবদাহে উৎপাদন হ্রাস ও চড়া দাম: গম রপ্তানি বন্ধ করল ভারত

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর সঙ্কটকালে বিশ্বকে শস্য জোগানোর আশা দেখিয়ে আসা ভারত এবার উল্টো পথে হাঁটল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 08:42 AM
Updated : 14 May 2022, 09:38 AM

আকস্মিকভাবেই গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমানোর লক্ষ্যে শনিবার থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বিশ্বের মানুষের দুই প্রধান খাদ্যের একটি গম রপ্তানিতে ভারত দ্বিতীয় বৃহৎ রাষ্ট্র। বিশ্বে গম রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলোর দুটি ইউক্রেইন ও রাশিয়া এখন যুদ্ধে রয়েছে. যারা বিশ্ববাজারে এক-তৃতীয়াংশ গমের জোগান দেয়।

ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর পর খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা যখন করা হচ্ছিল, তখন ভারত গম সরবরাহ বাড়িয়ে বিশ্বকে সহায়তা করতে পারে বলেও আভাস দিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল থেকে রপ্তানি কমে যাওয়ার পর গমের ক্রেতারা যখন ভারতের দিকে ঝুঁকছিল, তখনই দেশটি রপ্তানি বন্ধ করে দিল।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপদাহে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি নিষিদ্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।

ভারতের সরকার অবশ্য বলছে, যেসব রপ্তানি আদেশ আগেই হয়েছে, সেসব দেশ গম পাবে। যেসব দেশ খাদ্য নিরাপত্তায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচেছ, তাদের ক্ষেত্রেও রপ্তানির অনুমতি তারা দেবে।

গম রপ্তানিতে ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়ানোর এবং এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব দেশগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘হতাশাজনক’ বলছেন একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুম্বাইভিত্তিক ডিলার। তিনি রয়টার্সকে বলেন, “আমরা আরও দুই থেকে তিন মাস পরে রপ্তানি বন্ধে সিদ্ধান্তটি আশা করেছিলাম, কিন্তু মূল্যস্ফীতির অঙ্ক সরকারের মনোভাব পরিবর্তন করেছে বলে মনে হচ্ছে।”

খাদ্যের ক্রমবর্ধমান দাম এপ্রিলে ভারতের মুল্যস্ফীতি গত আট বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলেছে। বাজারে লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার বাড়ানোর চাপও তৈরি করেছে।

বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০ লাখ টন গম রপ্তানি করে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশটি রেকর্ড ১৪ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে এবং মে মাসে প্রায় ১৫ লাখ টন রপ্তানির চুক্তিও করে ফেলে।

তবে এখন ভারতেই গমের দাম চড়া। সরকার নির্ধারিত ২০ হাজার ১৫০ রুপির বিপরীতে স্পট মার্কেটে প্রতি টন গমের দর সর্বোচ্চ ২৫ হাজার রুপিতে উঠেছে।

অথচ এপ্রিল থেকে শুরু অর্থবছরের জন্য ভারত রেকর্ড রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার রূপরেখা নিয়েছিল  এবং তা বাড়ানোর উপায় খুঁজতে মরক্কো, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের মতো কিছু দেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি পাঠনোরও সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি থেকে তাপদাহ শুরুর পর পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। গমের উৎপাদন এবার ১০ কোটি টনের আশপাশে নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মুম্বাইয়ের ওই ডিলার বলেন, “সরকারি ক্রয় ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। স্পট মার্কেটে গত বছরের তুলনায় সরবরাহও কমেছে। এ সব কিছু কম ফসল পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।"

“ভারতের গম রপ্তানির এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। কারণ এই মুহূর্তে বাজারে আর বড় সরবরাহকারী নেই,” বলেন আরেক ডিলার।