রনিল বিক্রমাসিংহে: বাতিলের খাতা থেকে শ্রীলঙ্কার ত্রাতার ভূমিকায়

পাঁচ বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি, সর্বশেষ ভোটে পরাজয় তার রাজনৈতিক জীবনকেই সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছিল; কিন্তু দেশ সঙ্কটাপন্ন হওয়ার পর সেই রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক জীবন জেগে উঠল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2022, 07:35 PM
Updated : 13 May 2022, 09:19 AM

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় জনবিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপাকসে বিদায় নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরে এলেন রনিল বিক্রমাসিংহে; নিলেন আবার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ।

৭৩ বছর বয়সী রনিল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) চেয়ারম্যান। ঝানু রাজনীতিক হিসেবে তার যেমন পরিচিতি, তেমনি পশ্চিমাদের কাছেও তার রয়েছে কদর, আবার প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশ ভারতের সঙ্গেও তার সুসম্পর্কের কথা বিদিত।

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের কালে বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর বিরোধী দল থেকে রনিলকে প্রধানমন্ত্রী করে দৃশ্যত জনবিক্ষোভ প্রশমন করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার একটি বৌদ্ধমন্দিরে আশির্বাদ নিতে যান রনিল বিক্রমাসিংহে। ছবি: রয়টার্স

প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া রনিলের জীবনের ৪৫ বছরই পার্লামেন্টে পদচারণা। তিনি প্রথম এমপি হন ১৯৭৭ সালে, মাত্র ২৮ বছর বয়সে।

‘কলম্বো এলিট’ রনিলের বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী এসমন্ড বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার মায়ের দিকের আত্মীয় জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনেকে এখন পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হয়।

জয়াবর্ধেনে ও প্রেমাদাসা সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার রনিল। প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমদাসা খুন হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১ মে প্রথম শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রনিল। এরপর আরও চারবার এ দায়িত্ব নিলেও কোনোবারই পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

ইউএনপির ভরাডুবি ঘটে ২০২০ সালের নির্বাচনে, রাজাপাকসেদের দল এসএলপিপির কাছে। সেবার একটি আসনেও জয় পায়নি রনিলের দল। আর কলম্বোয় সেটাই ছিল রনিলের প্রথম হার।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম নিউজ এইটিন লিখেছে, সেবার শোচনীয় হারের পর গণমাধ্যম রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক জীবনের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। দলীয় সভাপতির পদ ছাড়ার জন্য ইউএনপির নেতারা দাবি তুলেছিলেন।

কিন্তু রনিল তাতে কান না দিয়ে পদ আঁকড়েই ছিলেন, শুধু তাই নয়, গত বছর মনোনীত সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টেও ফেরেন। পার্লামেন্টে এখন দলের একমাত্র সদস্য তিনি, আর তিনিই এখন প্রধানমন্ত্রী। আর তার দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া একাংশ বিরোধী দলের আসনে।

নিউজ এইটটিন লিখেছে, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে রনিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বন্ড কেলেঙ্কারিতে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ডুবতে বসা রনিলের পাশে তখন দাঁড়িয়েছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। আর মাহিন্দার বিপদে রনিলও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন বলে কথা আছে।

রনিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মাহিন্দার টুইট তার সত্যতাই তুলে ধরে। পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী টুইটে জটিল এই মুহূর্তে নতুন প্রধানমন্ত্রীর সফলতা কামনা করেছেন।

সমালোচকদের কেউ কেউ মনে করছেন, রাজাপাকসে পরিবারকে রক্ষা করতেই রনিলকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে।

মাহিন্দার মতো গণনেতা না হলেও ভঙ্গুর শ্রীলঙ্কাকে রক্ষা করতে পারলে ইতিহাস হয়ে থাকবেন রনিল।

তবে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের অধীনে রনিল কি কাজ করবেন? অনেকেরই ধারণা, তার প্রধানমন্ত্রিত্বে সরকার গঠনের পর গোটাবায়াকে গদি ছাড়তে বলবেন।

কারণ মাহিন্দা পদত্যাগ করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার পদত্যাগের দাবি থেকে এখনও সরেনি।