শ্রীলঙ্কায় কেন একটি জাদুঘরে হামলা চালাল বিক্ষোভকারীরা?

শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী অস্থিরতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ও অসংখ্য মানুষের আহত হওয়ার তুলনায় তাৎপর্য সামান্য হলেও চলতি সপ্তাহে বিক্ষোভকারীদের রুদ্ররোষে একটি জাদুঘরের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার প্রতীকি গুরুত্বও অনেক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2022, 08:31 AM
Updated : 12 May 2022, 08:31 AM

ওই রাজাপাকসে জাদুঘরের অবস্থান দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের হাম্বানটোটায়, যে এলাকাটি ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

এটি তৈরি হয়েছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের বাবা-মা’র স্মৃতির উদ্দেশ্যে; মাহিন্দা নিজেও এককালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

জাদুঘরটিতে প্রয়াত ডন আলভিন রাজাপাকসে ও তার স্ত্রী দারদিনার ছবি, কাপড়চোপড়, গৃহস্থালি জিনিসপত্র ও হাতে লেখা চিঠি প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

বিক্ষোভকারীরা সোমবার ওই জাদুঘরে হামলা চালিয়ে আলভিন ও দারদিনার মোমের মূর্তি গুড়িয়ে দেয় এবং ভবনটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

এর মাধ্যমে সম্ভবত তারা রাজাপাকসে পরিবারের চেয়েও অন্য কিছুর ওপর তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিবিসি বলছে, মেদা মুলানা গ্রামে অবস্থিত এই জাদুঘরটি কথিত দুর্নীতির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। ২০১৪ সালে এটি খুলে দেওয়ার সময় মাহিন্দা ছিলেন প্রেসিডেন্ট; গোটাবায়া তখন ভাইয়ের প্রশাসনের প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন।

গোটাবায়া এই জাদুঘরটি বানিয়েছেন ব্যক্তি মালিনানাধীন জমিতে কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থে। জাদুঘরটির নির্মাণ কাজে জনশক্তি সররবাহে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গোটাবায়ার দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষা ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ও নকশা প্রস্তুত ও অন্যান্য প্রাথমিক কাজে জড়িত ছিল।

২০১৫ সালের নির্বাচনে মাহিন্দা হেরে গেলে জাদুঘর নির্মাণে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।

জাদুঘর নির্মাণে অন্যায়ের কথা উড়িয়ে দেন গোটাবায়া; জাদুঘরটিতে সরকারের ৬ কোটি লঙ্কান রুপির বেশি খরচের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। অবশ্য পরে কিছু অর্থ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হয়। তবে জাদুঘর নিয়ে তদন্তে মাহিন্দাকে জড়ানো হয়নি।

২০০৯ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে ২৫ বছর ধরে চলা যুদ্ধে জয় এনে দেওয়ায় অনেকেই এ দুই রাজাপাকসে ভাইয়ের গুণমুগ্ধ ছিলেন।

যুদ্ধ চলার সময় অনেকেই তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে জয়কে অসম্ভব মনে করতেন; যে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিদের কাছেই দুই ভাই পরে নায়কের মর্যাদা পেয়েছিলেন।

সেই জনপ্রিয়তার বলে রাজাপাকসে পরিবার নিজেদেরকে দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা মনে করা শুরু করে; তারাই দ্বীপদেশটিকে সন্ত্রাসের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করেছে, এমন ভাবনা পেয়ে বসে তাদের। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটে রাজাপাকসেদের ওই জনপ্রিয়তা উবে গেছে।

“এই নেতারা আমাদেরকে ৩০ বছর ধরে চলা সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এজন্য আমরা তাদের সম্মান করি। কিন্তু এটা অর্থহীন। তারা আমাদের লুট করেছে। তারা আস্ত দেশ বেচে দিয়েছে আর তাদের মা-বাবার কাপড়চোপড় দেখাতে আমাদের অর্থের কোটি কোটি রুপি খরচ করে একটি জাদুঘর বানিয়েছে,” বলেছেন জাদুঘরের কাছে টাঙ্গালে বালিকুদাওয়াতে বাস করা ৬২ বছর বয়সী নারী বিএম নন্দাওয়াথি।

“এই দেশের প্রতিটি ডলার লুট করেছে তারা,” বলেছে তিনি।

নন্দাওয়াথির এ কথার সঙ্গে একমত হাম্বানটোটার ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা ডিক্সন বিক্রমারাচ্ছি।

“তারা এই জাদুঘর বানিয়েছে জনগণের অর্থে, যা তারা কখনোই কাজের মাধ্যমে আয় করেনি। তারা নকশা করা দামি জুতা আর কাপড়চোপড় পরে বিলাসী জীবন যাপন করছে আর দেশের দরিদ্ররা ভুগছে, তিন বেলা তো দূর একবেলাও খেতে পারছে না,” বলেছেন তিনি।

আরও খবর: