নতুন সরকার গঠনের আহ্বান শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীদের

সংকটগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একটি নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির বিক্ষোভকারীরা ও প্রধান একটি বাণিজ্য গোষ্ঠী। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2022, 05:06 AM
Updated : 11 May 2022, 05:33 AM

সোমবার দিনভর সহিংসতায় আটজন নিহত ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগের পরদিন মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা বা জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী যে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি গুলি করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। সরকার সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ জারি আছে।  

পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এক টুইটে বলেছেন, “সাংবিধানের ভিত্তিতে ঐকমতের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।”

ছবি: রয়টার্স

কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা ফের একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা যেখানে হামলা চালিয়েছিল কলম্বোর সেই ‘গোটা গো গামা’ বিক্ষোভস্থলেও ফের জড়ো হয়েছে তারা।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের একজন লাহিরু ফেরনানডো (৩৬) বলেন, “এখন পুরো দেশ আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। তারা ভুল প্রজন্মকে লাথি মেরেছে।”

কিছু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান চাপে প্রেসিডেন্ট যদি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সংবিধানে পার্লামেন্টের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচনের বিধান দেওয়া আছে।

“তাই ক্ষমতা কেন্দ্রে শূন্যতা তৈরি হবে না। পার্লামেন্টের সদস্যদের জন্য একটি আন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেওয়ার বিধানও আছে,” বলেছেন শ্রীলঙ্কান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর পলিসি আল্টারনেটিভস’ এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ভবানি ফনসেকা। 

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা পোশাক শিল্পখাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘জয়েন্ট অ্যাপারেলস অ্যাসোসিয়েশন ফোরাম’ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় গত শুক্রবার দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে সরকার। 

স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার মারাত্মক ঘাটতির কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিও বন্ধ হয়ে আছে।

ছবি: রয়টার্স

কয়েক মাস ধরে দেশটির বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সহায়তা যুগিয়ে যাচ্ছে মূলত প্রতিবেশী ভারত, তারা তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ দেশটিকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিনশ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দেশটি এবং চীনের কাছেও সাহায্য চেয়েছে।

চীন ও ভারত ২ কোটি ২০ লাখ লোকের দেশ শ্রীলঙ্কার ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য বহুদিন ধরেই পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপটি কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও টানা বিদ্যুৎ সংকটে লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে জনতা। তারা এসব সংকটের জন্য কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। মাসখানেরও বেশি সময় ধরে চলা এ প্রতিবাদ অনেকাংশেই শান্তিপূর্ণ ছিল।

কিন্তু সোমবার ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের শিবিরে হামলা করলে জনতার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। এত দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আট জন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়।

সহিংসতা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। দেশটির মন্ত্রিসভার সব সদস্যও পদত্যাগ করেন। এতে শ্রীলঙ্কার একটি ঐকমত্যের সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকায় আর গোটাবায়া পদ ছাড়তে না চাওয়ায় শ্রীলঙ্কার পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে।

আরও পড়ুন: