এ ক্ষমতার বলে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ।
মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর পরিস্থিতি মোটের ওপর শান্ত আছে বলে জানা গেছে। সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সোমবার জারি করা কারফিউয়ের মেয়াদ বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে বিরোধীদের দাবি মেনে পদত্যাগ করছেন না প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
তিনি নতুন কাউকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার সরকার সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই লোকজনকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করার বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে।
সামরিক বাহিনী লোকজনকে আটক করার পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের হেফাজতে রাখতে পারবে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী মানুষের বাড়ি, গাড়িতেও তল্লাশি চালাতে পারবে বলে মঙ্গলবার সরকারি এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আর সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা আটক ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের হেফাজতে রাখতে পারবে, তারপর নিকটবর্তী থানায় হস্তান্তর করতে হবে।
জরুরি এসব পদক্ষেপের অপব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিছু বিশ্লেষক।
শুক্রবার সরকারবিরোধী প্রতিবাদ তীব্র হয়ে ওঠার মুখে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া।
দেশটির সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে মঙ্গলবার সকালে সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রি ছেড়ে গেছেন।
তারা একটি হেলিকপ্টারে করে কলম্বো থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরে ওই ঘাঁটিতে পৌঁছান বলে ঘটনার বিষয়ে সরাসরি জানেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন। ওই নৌঘাঁটির বাইরেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র নিহাল থালদুয়ার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত, তবে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
নিহাল থালদুয়া জানান, সোমবার যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তিন জন গুলিবিদ্ধ ছিলেন। সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রপ্তার করা হয়নি।
সরকারি কর্মকর্তাদের দপ্তরজুড়ে এলোমেলো কাগজপত্র, ফাইল ও ভাংচুর করা আসবাবের আবর্জনা ছড়িয়ে আছে।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বিরোধী দলগুলো এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকেই দায়ী করে আসছেন।
সোমবার রাজাপাকসের পরিবারের সমর্থকরা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভে থাকা সরকারবিরোধীদের ওপর হামলে পড়লে সংঘাত ব্যাপক মাত্রা পায়। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপকসে।
সন্ধ্যার দিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা কলোম্বো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে হাম্বানটোটায় রাজাপাকসে পরিবারের পৈতৃক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। কয়েকজন এমপি এবং সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতেও এ সময় আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
তামিল টাইগারদের নির্মূল করে প্রশংসা কুড়ালেও মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকার পরে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগে জর্জরিত হয়। সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও করেন।
শ্রীলঙ্কার বড় সঙ্কট হয়ে এসেছে হাতে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার না থাকা। এজন্য সরকার মহামারীকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা দুষছেন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে।
শ্রীলঙ্কা সরকার এখন ৫১ বিলিয়ন দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ঋণের কিস্তি হিসেবে দেশটির এই বছর ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা থাকলেও ওই অর্থও দেশটির হাতে নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতলেও তেমন সাহায্য পায়নি।
পুরনো খবর-