সংঘাত, প্রাণহানির পর টিএলপিকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ তকমা পাকিস্তান সরকারের

নিষিদ্ধঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন তেহরিক ই লাব্বাইকের (টিএলপি) সশস্ত্র সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ পুলিশ সদস্য নিহত ও ২৬৩ জন আহত হওয়ার পর সংগঠনটিকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 11:06 AM
Updated : 28 Oct 2021, 11:06 AM

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডন।

ফাওয়াদ জানিয়েছেন, টিএলপিকে গুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার; তাদের লং মার্চে অংশগ্রহণকারীরা যেন কোনোভাবেই রাজধানীতে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, রেঞ্জার্স ও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার লাহোরের কাছে শেইখুপুরার মহাসড়কে টিএলপি সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে টিএলপি রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা পুনরায় শুরুর চেষ্টা চালালে এ সংঘর্ষ বাধে।

পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক রাও সরদার পরে বলেন, “টিএলপির সদস্যদের কাছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ছিল, তারা সরাসরি পুলিশের ওপর গুলি চালিয়েছে।”

নিষিদ্ধঘোষিত একটি সংগঠন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করেছে, একে ‘গুরুতর উদ্বেগের’ বিষয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

টিএলপি জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদেরও ২ সদস্য নিহত হয়েছে। তবে তাদের এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।

পাঞ্জাবের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রদেশটিতে দুই মাসের জন্য আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টিএলপি সদস্যরা গত শুক্রবার থেকেই পাকিস্তানের ব্যস্ততম একটি মহাসড়ক আটকে রেখেছে। তারা তাদের আটক এক নেতার মুক্তি এবং ফ্রান্সের একটি রম্য পত্রিকায় নবী মোহাম্মদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হওয়ায় পাকিস্তানে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ ও রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে।

তবে পাকিস্তানের সরকার জানিয়েছে, তারা টিএলপির দাবি মেনে ফ্রান্স দূতাবাস বন্ধ করতে পারবে না। আর এ মুহুর্তে পাকিস্তানে ফ্রান্সের কোনো রাষ্ট্রদূত নেইও।

“মন্ত্রিসভা টিএলপিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের অন্য গোষ্ঠীগুলোকে যেভাবে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, টিএলপিকেও সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। পাকিস্তান এর আগে আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে পরাজিত করেছে,” মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন ফাওয়াদ।

টিএলপিকে ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠী অর্থ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ভারতীয় ওই গোষ্ঠীগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেও পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, ভাষ্য তার।

“যারা ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যাপক অভিযান চালানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা,” অনেক সাংবাদিকও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ফাওয়াদ।

২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই টিএলপি তাদের দাবি দাওয়া জানাতে একটি পদ্ধতিই ব্যবহার করে আসছে, সেটি হল- সড়ক অবরোধ।

“কিন্তু রাষ্ট্রের ধৈর্যরও সীমা আছে,” বলেছেন পাক তথ্যমন্ত্রী।

এর আগেও টিএলপির সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল ৭০০রও বেশি।

এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার এ সদস্য বলেন, সরকার কোনো সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করতে পারে না। এজন্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দাখিল করতে যাচ্ছে।

“আমরা পিটিশনটি চূড়ান্ত করেছি, শিগগিরই এটি জমা দেওয়া হবে,” বলেছেন তিনি।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, টিএলপি যে ধরনের কর্মকাণ্ড করছে তাতে তারা ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় চলে যেতে পারে।

“তেমনটা হলে, কোনোকিছুই আমাদের হাতে থাকবে না,” বলেছেন তিনি।

বুধবার আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যই ৭০, তাদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন, জানিয়েছেন পাকিস্তানের এ মন্ত্রী।