বিদেশিদের আফগানিস্তান ত্যাগে অনুমতি তালেবান অন্তর্বর্তী সরকারের

নতুন তালেবান সরকার আফগানিস্তানে এখনও রয়ে যাওয়া ২০০ মার্কিন ও অন্য বিদেশি নাগরিকদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2021, 12:02 PM
Updated : 9 Sept 2021, 12:02 PM

বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে ভাড়া করা বিমানে এ বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে, বলেছেন তিনি।

এ বিদেশিদের নিয়ে উড়াল দেওয়া ফ্লাইটগুলোই গত মাসে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কাবুল থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যে স্থান করে নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মধ্য অগাস্টে তালেবান কাবুল দখল করলে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলা বিদেশি নাগরিক, কূটনীতিক ও তাদের আফগান সহযোগীদের দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এরপরও ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার বিদেশি ও ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সরিয়ে নিতে পারে তারা।

মঙ্গলবার তালেবান আফগানিস্তানের নতুন অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নামও ঘোষণা করে। ওই মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বেশিরভাগই পশতুন জাতিগোষ্ঠীর পুরুষ সদস্য, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’ থাকা বেশ কয়েকজন এবং কট্টরপন্থিরা স্থান করে নিয়েছেন।

তালেবান প্রশাসন এবার আগের তুলনায় অনেক বেশি উদার হবে- আন্তর্জাতিক মহলের এই প্রত্যাশায় অন্তর্বর্তী এ মন্ত্রিসভা পানিও ঢেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।

বিদেশিদের আফগানিস্তান ছাড়তে অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ তালেবানের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা।

যাদের আফগানিস্তান ছাড়তে দিতে তালেবান সম্মত হয়েছে, তাদের মধ্যে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরিফে দিনকয়েক ধরে আটকা মার্কিন বেসামরিক নাগরিক ও অন্য বিদেশিরা আছেন কিনা, ওই কর্মকর্তা তা জানাতে পারেননি। 

ওই বিদেশিদের ভাড়া করা বিমানগুলো আফগানিস্তান ছাড়ার অনুমতি না পাওয়ায় তারা মাজার-ই-শরিফে আটকা পড়ে আছেন।

তালেবান যে তাদের পায়ের নিচের মাটি আরও বিস্তৃত করতে এবং বিশ্বের কাছে তাদের আরেকটু উদার ভাবমূর্তি তৈরি হোক তা চাইছে না, মঙ্গলবার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে সে সংকেতই এসেছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

গত মাসে ঝড়ের বেগে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলের আগে তালেবান অনেক নেতাই তাদের পরবর্তী সরকার আগের মতো কট্টর হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। হাসান আখুন্দ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সেই আশ্বাস পূরণ করবে, এমন সম্ভাবনা কম, বলছেন অনেকে।

ঘোষিত এই অন্তর্বর্তী সরকারকে বুধবার অনেক দেশই সতর্কতা ও হতাশার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে। কাবুলে কয়েকডজন নারী পুরুষসর্বস্ব মন্ত্রিসভাকে প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভও করেছেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তালেবানের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে আপত্তি জানালেও আফগানিস্তানে মানবিক ত্রাণসাহায্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে এ সাহায্য থাকবে কিনা, তা নির্ভর করবে তালেবানের কর্মকাণ্ডের ওপর, বলেছে তারা।

সহিংসতা ও উগ্রবাদ প্রত্যাখ্যান করে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে নতুন তালেবান সরকার সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করেছে সৌদি আরব।

মঙ্গলবার ঘোষিত মন্ত্রিসভায় যাদের স্থান হয়েছে, তাদের কারণে আফগানিস্তানের এ সরকারের পক্ষে পশ্চিমা সরকারগুলোর স্বীকৃতি পাওয়া বেশ কঠিন হবে, যে কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে তালেবানকে বেগ পেতে হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।      

তালেবানের নতুন এই অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভায় একসময় গুয়ানতানামো বে’র মার্কিন সামরিক কারাগারে আটক ব্যক্তিরা যেমন আছেন, তেমনি আছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানির মতো যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’ থাকা একজন, যার জন্য কোটি ডলারের পুরস্কারও ঘোষিত হয়েছিল।

সিরাজুদ্দিনের চাচা খলিল-উর রহমানকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যও ধার্য হয়েছিল ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কার, খলিল এখন তালেবানের নতুন সরকারের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক মন্ত্রী।