কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য ‘আওয়াজ তুলবে’ তালেবান

ভারতশাসিত কাশ্মীরের মুসলমানদের পক্ষে তালেবানরা জোর গলায় বলবে বলে জানিয়েছেন গত মাসে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া গোষ্ঠীটির এক মুখপাত্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2021, 09:27 AM
Updated : 4 Sept 2021, 09:27 AM

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুহাইল শাহীন নামের এ মুখপাত্র বলেন, “মুসলমান হিসেবে কাশ্মীর, ভারত বা বিশ্বের যে কোনো দেশের মুসলমানদের জন্য আওয়াজ তোলার অধিকার আমাদের আছে।”

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের আলাদা দুটি অংশ ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে; উভয় দেশ কাশ্মীরের সমগ্র অংশ কেবলই তাদের বলে দাবি করে আসছে।

শক্তিশালী স্বাধীনতাকামী আন্দোলন থাকায় গত ৩০ বছর ধরে ভারতশাসিত কাশ্মীরে তুমুল অস্থিরতা ও সহিংসতা দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী চলে যাওয়ার পর গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়, কট্টরপন্থি এ গোষ্ঠীটি শিগগিরই একটি নতুন সরকারের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

এর মধ্যেই তাদের এক মুখপাত্র প্রথমবার ভারতশাসিত কাশ্মীর নিয়ে মুখ ‍খুললেন।

তালেবানের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আগে বলেছিলেন সমগ্র কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়েই। 

সিএনএন-নিউজকে১৮কে তালেবান নেতা আনাস হাক্কানি বলেছিলেন, “কাশ্মীর আমাদের আওতার মধ্যে নেই, আর হস্তক্ষেপ আমাদের নীতিবিরোধী।”

আর পাকিস্তানভিত্তিক একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদকে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সব সংকট মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিবিসিকে শাহীন বলেছেন, কোনো দেশে সশস্ত্র অভিযান চালানোর নীতি নেই তালেবানের।

গোষ্ঠীটির মুখপাত্র এমন এক সময়ে এসব বললেন যখন ভারত তালেবানের অধীনে আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখদের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারতে মুসলমানদের ওপর হামলা, নির্যাতন বেড়ে যাওয়া নিয়েও বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন।

দুই বছর আগে ভারতের সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের প্রায় সবকিছু বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছিল; উপত্যকাটি এরপর থেকেই আগের চেয়েও বেশি উত্তপ্ত হয়ে আছে।

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবানের অনেক উপদল তাদের চোখ ভারতশাসিত কাশ্মীরের দিকে তাক করতে পারে বলে ভয় অনেকের; পাকিস্তানের অনেক ছোট-বড় গোষ্ঠী এতে ঘি’ও ঢালতে পারে।

সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে এক টিভি বিতর্কে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের নেতা নিলম ইরশাদ শেখকে ‘তালেবান বলেছে তারা আমাদের সঙ্গে আছে এবং তারা কাশ্মীরকে স্বাধীনে আমাদের সহায়তা করবে’ এমনটা বলতে শোনা গেছে। 

তালেবান আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যেতে পারলেও ভারতকে সতর্কতার সঙ্গেই পা ফেলতে হচ্ছে।

তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা হাক্কানি নেটওয়ার্ক অতীতে অনেকবারই ভারতীয় নাগরিক, কর্মকর্তা ও স্থাপনার ওপর হামলা করেছে; এসবের মধ্যে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে হামলাও আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর ভারতের আফগান কৌশল নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কারনেগি ইন্ডিয়া।

তালেবানের মুখপাত্র শাহীন বলেছেন, হাক্কানি নেটওয়ার্ককে নিয়ে যা যা বলা হচ্ছে, তা ‘নিছকই দাবি’।

“হাক্কানিরা আলাদা কোনো গোষ্ঠী নয়। তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের অংশ। তারাই ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এক মুখপাত্র সম্প্রতি তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক আলাদা সংগঠন বলে দাবি করেছিলেন।

১৯৯৯ সালে ছিনতাই হওয়া ভারতীয় বিমান আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর ছিনতাইকারীদের পালিয়ে যেতে তালেবান সহায়তা করেছিল, এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেন শাহীন। বলেন, তালেবান সেসময় যা করেছে, তার জন্য নয়া দিল্লির খুশি থাকা উচিত।

“ভারত আমাদেরকে অনুরোধ করেছিল যেন বিমানটি (কান্দাহারে) নামতে দেওয়া হয়, কেননা বিমানটির জ্বালানি ফুরিয়ে আসছেল। আমরা তাদেরকে জিম্মিদের মুক্ত করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছি,” বলেন এ তালেবান মুখপাত্র।