বেশিরভাগ ভারতীয়ই ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ের বিপক্ষে, বলছে জরিপ

ভারতের বেশিরভাগ নাগরিক নিজেকে ও তাদের দেশকে ধর্মীয়ভাবে সহনশীল মনে করলেও তাদের অধিকাংশই ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়েকে সমর্থন করেন না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2021, 01:24 PM
Updated : 30 June 2021, 01:37 PM

দেশটিতে বাস করা আলাদা আলাদা ধর্মের অনুসারীরা আন্তধর্মীয় বিয়ে বন্ধ করাকে অন্য অনেক কিছুর চেয়ে ‘বেশি অগ্রাধিকার’ও দিচ্ছেন। 

গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে এসব উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

পিউ ১৭টি ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে এ জরিপ করেছে; আন্তঃধর্মীয় বিয়ে নিয়ে তারা ২৬টি রাজ্য ও ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

এ জরিপে অংশ নেওয়া মুসলিমদের ৮০ শতাংশই আন্তঃধর্মীয় বিয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জানান, মুসলমানরা অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করুক, এমনটা দেখতে চান না তারা। একই মত হিন্দুদের ৬৫ শতাংশেরও।

জরিপে ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতীয়তার সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।

এর উত্তরে দেখা যায়, হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে ভারতীয় পরিচয়ের নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেই মনে করেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ হিন্দু বলেন, ‘প্রকৃত ভারতীয়’ হতে হলে হিন্দু হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পিউ’র গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যবোধ ও রীতিনীতিতে মিল থাকলেও ভারতের প্রধান প্রধান ধর্মের অনুসারীরা ‘অন্যান্যদের সঙ্গে তাদের মিলের বিষয়টা প্রায়ই অনুভব করেন না’।

“ভারতীয়রা ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে উদ্দীপনা দেখায় আবার একইসঙ্গে নিজেদের সম্প্রদায়কে আলাদা করে রাখাকেও অধিক প্রাধান্য দেয়। তারা একসঙ্গেই থাকছেন, আবার বিচ্ছিন্নও,” বলা হয়েছে গবেষণায়।

অনেকে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে যেতে চান না, কোথাও কোথাও অন্য ধর্মের কাউকে নিজেদের বসবাসের এলাকা বা গ্রামে থাকতে দিতেও রাজি হন না অনেকে।

রক্ষণশীল ভারতীয় পরিবারে হিন্দু-মুসলিম বিয়ে নিয়ে আলোচনা অনেকদিন ধরেই নিষিদ্ধ ছিল; দেশটিতে এখন দুই আলাদা ধর্মের অনুসারী স্বামী-স্ত্রীকে নানান আইনি জটিলতার মুখেও পড়তে হচ্ছে।

ভারতে আন্তঃধর্মীয় বিয়ে হয় বিশেষ বিবাহ আইনে; এতে আলাদা আলাদা ধর্মাবলম্বীর মধ্যে বিয়ের আগে ৩০ দিনের নোটিস দিতে হয়।

সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ ধরনের বিয়ে ঠেকাতে বেশ কিছু আইন করা হয়েছে; যার মধ্যে আছে জোর করে বা জালিয়াতির মাধ্যমে ‘আইনবহির্ভূত ধর্মান্তর’ নিষিদ্ধ করা।

‘লাভ জিহাদের’ বিরুদ্ধে কট্টরপন্থি হিন্দুদের টানা প্রচারণার ধারাবাহিকতাতেই এসব আইন করা হয়েছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। কট্টরপন্থি হিন্দুদের অভিযোগ, হিন্দু নারীদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার উদ্দেশ্য থেকেই মুসলমান যুবকরা তাদের ভালোবাসার ফাঁদে ফেলছে। একেই ‘লাভ জিহাদ’ বলছে তারা। 

আন্তঃধর্মীয় বিয়ের বিরোধিতা যে ভারতীয় সমাজে কত প্রকট তা বিয়ের পর থেকেই টের পাচ্ছেন সুমিত চৌহান ও আজরা পারভীন। দলিত পরিবারের সুমিত ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মুসলিম আজরাকে।

সুমিত জানান, তার হিন্দু আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে মুসলমানদের নিয়ে নানান ভ্রান্ত ধারণা ছিল; কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত তার মা ও ভাই-বোনকে বোঝাতে সক্ষম হন।

আজরার বেলায় ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। তার পরিবার বিয়েতে আপত্তি তোলায় শেষ পর্যন্ত গোপনেই গাটছড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাদেরকে।

“এজন্য আজরার পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে প্রায় তিন বছর কথাবার্তাই বলেনি,” বলেছেন সুমিত।

এখন অবশ্য তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়, যদিও আজরার পরিবার এখনো ওই বিয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেয়নি।

“গত বছর আমার স্ত্রীর ছোট বোনের বিয়ে হল, কিন্তু আমাদেরকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি,” বলেন সুমিত।

তবে এতকিছুর পরও ভিন্ন ধর্মের কাউকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে খেদ নেই তার।

“যাকে ভালোবাসেন, তাকে বিয়ের ক্ষেত্রে নিজের ধর্ম বদলানো উচিত নয়,” বলেছেন তিনি।