কোভিড: টিকার দুই ডোজের ব্যবধান বৃদ্ধিতে সায় ছিল না ভারতের বিজ্ঞানীদের

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার দুই ডোজের মধ্যে সময় দ্বিগুণ বাড়ানোর বিষয়ে ভারতের সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2021, 06:15 AM
Updated : 16 June 2021, 06:15 AM

টিকাদান বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক দলের (এনটিএজিআই) তিন সদস্য রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

চলমান মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৩ মে কোভিশিল্ডের দুটি ডোজ গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় ছয় থেকে আট সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করে।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশটিতে চাহিদা বিপরীতে টিকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এনটিএজিআইয়ের সুপারিশ এবং ব্রিটেনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়।

তবে এনটিএজিআই পর্ষদের তিন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্ষদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্যউপাত্ত ছিলো না। 

তাদের একজন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজির সাবেক পরিচালক এম ডি গুপ্তে বলেন, দুটি ডোজের মধ্যবর্তী সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময়সীমাকে সমর্থন করেছে এনটিএজিআই। ১২ সপ্তাহের পর টিকা দেওয়া হলে তার প্রভাব নিয়ে পর্ষদের কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না।

“আট থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমা আমরা সবাই গ্রহণ করতে পারি, কিন্তু ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমার সিদ্ধান্তটি সরকার নিয়েছে। এটা ঠিক থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।”

গুপ্তের এই বক্তব্য সমর্থন করেছেন এনটিএজিআইতে তার সহকর্মী ম্যাথিউ ভার্ঘেসে।

অথচ এনটিএজিআই পর্ষদের প্রধানের বরাত দিয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টুইট বার্তায় জানিয়েছে, বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই নাকি সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।

“পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে কোন বিবাদ দেখা দেয়নি।”

১৩ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়লের বিবৃতিতে বলা হয়, এনটিএজিআইয়ের কোভিড-১৯ কার্যকরী পর্ষদের সুপারিশ অনুযায়ী কোভিশিল্ডের দুটি ডোজ গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়সীমা ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করা হল।

১৫ মে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, এই মধ্যবর্তী সময় বাড়ানোর কারণ টিকার ঘাটতি নয় বরং এটি একটি ‘বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত’।

সাত সদস্যের ওই কোভিড কার্যকরী পর্ষদের একজন জে পি মুলিইল জানান, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার যে সময়ের পার্থক্য তা বাড়ানোর বিষয়ে এনটিএজিআই সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করার কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

এ বিষয়ে পর্ষদের প্রধান এন কে অরোরার বক্তব্য জানতে রয়টার্স যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি; শুধু বলেছেন, এনটিএজিআই সম্মিলিতভাবেই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়ে থাকে।

ভারতে জনগণের মধ্যে এ পর্যন্ত যে ২৫ কোটি ৭৫ লাখ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই অক্সফোর্ড-অ্যস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার উৎপাদন করা কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের উৎপাদন করা কোভ্যাক্সিন।