কালো ছত্রাক: ভারতে আক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার, বাড়ছে আতঙ্ক

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল ভারতে গত কয়েক মাসে ৮ হাজার ৮০০রও বেশি মানুষের দেহে নতুন বিপদ হিসেবে হাজির হওয়া প্রাণঘাতী ‘কালো ছত্রাক’ বা মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2021, 12:21 PM
Updated : 23 May 2021, 12:32 PM

বিরল এ সংক্রমণে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো। বাঁচার জন্য অনেককে চোখও ফেলে দিতে হয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে কয়েক হাজার ব্যক্তির দেহে এ ‘কালো ছত্রাকের’ সংক্রমণ মিলেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

চিকিৎসকরা এ সংক্রমণের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েডের যোগ আছে বলে ধারণা দিয়েছেন।

ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে মিউকরমাইকোসিসে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলেও মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিন পর এ ছত্রাককে আঘাত হানতে দেখা যাচ্ছে, বলছেন চিকিৎসকরা।

ভারতে এখন পর্যন্ত যতজনের দেহে বিরল এ সংক্রমণ ধরা পড়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি মিলেছে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে।

আরও অন্তত ১৫টি রাজ্যে মিউকরমাইকোসিসের ঊর্ধ্বগতি কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মোট ২৯টি রাজ্যকে মহামারী ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে।

বিরল এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতে যত নতুন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে, তার সবগুলোই অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণ হয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে এক হাজার ১০০ শয্যার মহারাজা যশবন্ত রাও হাসপাতালে এক সপ্তাহ আগেও মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি ছিলেন মাত্র ৮ জন; বাড়তে বাড়তে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫তে।

৮০ শতাংশেরও বেশি রোগীর যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার করা দরকার, বলেছেন হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. ভিপি পান্ডে।

যশবন্ত রাও হাসপাতালে ‘কালো ছত্রাকে’ আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১১টি ওয়ার্ডে মোট ২০০টি শয্যা রাখা হয়েছিল। যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে কয়েকদিন পর নতুন কাউকে ভর্তি করা যাবে না বলেই ধারণা পান্ডের।

“আমরা আগে বছরে এ ধরনের এক কি দুইটা ঘটনা পেতাম। আর এখন রোগী যেভাবে বাড়ছে, তা সত্যিই অপ্রত্যাশিত,” বলেছেন তিনি। 

কেবল ইন্দোরেই মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত ৪০০ রোগীর খোঁজ মিলেছে বলে জানান এ চিকিৎসক।

“কালো ছত্রাকের সংক্রমণ এখন কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। রোগীদের যদি যথাসময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা দেওয়া না যায়, তাহলে এতে মৃত্যু হার বেড়ে ৯৪ শতাংশে চলে যেতে পারে। এর চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল এবং ওষুধের সরবরাহ সীমিত,” বলেছেন তিনি।

মেডিসিনের এ চিকিৎসক শহরের ৪টি হাসপাতালে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের চিকিৎসা নেওয়া ২০১ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

এসব তথ্যে দেখা গেছে, রোগীদের বেশিরভাগই কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ও পুরুষ। অধিকাংশ রোগীকে কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল। আক্রান্তদের সিংহভাগের শরীরে নানান জটিলতা বিশেষ করে ডায়াবেটিসের উপস্থিতি পাওয়া আছে।

অন্য এক গবেষণায় ভারতের ৪ চিকিৎসক মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের শিকার হওয়া শতাধিক কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের গবেষণায় ‘কালো ছত্রাকে’ আক্রান্তদের ৭৯ জনই পুরুষ আর ৮৩ জনের ডায়াবেটিস আছে বলে জানা গেছে।

মুম্বাইয়ের দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৪৫ জনকে নিয়ে হওয়া অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের সবাই হয় আগে থেকে ডায়াবেটিক রোগী, না হয় হাসপাতালে ভর্তির সময় তাদের শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।

“কোনো মিউকরমাইকোসিস রোগীর রক্তেই শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে না,” বলেছেন চিকিৎসক অক্ষয় নয়ার।