কালো ছত্রাক: ভারতের ২৯ রাজ্যে মহামারী ঘোষণার আহ্বান

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে প্রাণঘাতী ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক’। সেখানে কালো ছত্রাকে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে রাজ্যগুলোতে মহামারী ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2021, 09:40 AM
Updated : 21 May 2021, 09:40 AM

কালো ছত্রাক বা মিউকরমাইকোসিস হলো এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ; যা বিরল, কিন্তু বিপদজনক। নাক, চোখ এবং অনেক সময় মস্তিষ্কেও এ ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যায়।

শরীরে এ ছত্রাকের সংক্রমণ হলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুধুমাত্র চোখ বা চোয়ালের হাড় অপসারণ করে রোগীদের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব।

সাধারণত বিরল হলেও সম্প্রতি ভারতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে।

চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় ‘স্টেরয়েড’ ব্যবহারের সঙ্গে রোগীদের কালো ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে যাদের ডায়বেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক বেশি।

চিকিৎসকরা বিবিসিকে বলেন, সাধারণত কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠার ১২ থেকে ১৫ দিন পর শরীরে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়।

বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগারওয়াল ভারতের ২৯ রাজ্যের সরকারকে চিঠি লিখে নিজ নিজ রাজ্যে কালো ছত্রাকের সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

মহামারী ঘোষণা করলে মন্ত্রণালয় থেকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে রাজ্যগুলোতে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।

ভারত জুড়ে ঠিক কত মানুষ কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি।

তবে গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপি জানান, তার রাজ্যে প্রায় ১৫০০ মানুষ কালো ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে জানান, গত দুই মাসে তাদের হাসপাতালে কালো ছত্রাকে আক্রান্ত ২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। অথচ, গত বছর জুড়ে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় জন।

চিকিৎসকরা আরো জানান, কালো ছত্রাক রোগীর মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে মৃত্যু বলতে গেলে অনিবার্য। তাই রোগীর প্রাণ রক্ষায় ছত্রাকের মস্তিষ্কে পৌঁছানো আটকাতে তারা বাধ্য হয়ে আক্রান্তদের চোখ বা চোয়ালের হাড় অপরাসণ করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান।

মিউকরমাইকোসিস কি?

মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ ঘটে। মাটি, গাছপালা, বিষ্ঠা, এবং পচা ফল ও সবজি থেকে কেউ মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে আসতে পারেন।

মাটি ও বাতাস এবং এমনকি সুস্থ মানুষের নাকে বা কফেও এটা পাওয়া যায়।

যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তা পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতি হয়ে উঠতে পারে।