গুজরাট উপকূলে আঘাত হানার পথে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় তকতে

ভারতের গুজরাট উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা তকতে ‘অত্যন্ত মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয়েছে বলে সতর্ক করেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2021, 05:29 AM
Updated : 17 May 2021, 06:10 AM

স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে এটি গুজরাট উপকূলে আঘাত হানতে পারে আর মঙ্গলবার সকালে দিকে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

এদিন শেষ খবর পর্যন্ত তকতে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে গুজরাট উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

সোমবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ‘অত্যন্ত মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয় বলে জানায় ভারতের আবহওয়া বিভাগ।

তকতের প্রভাবে আবহাওয়া অনূকূল না থাকায় মুম্বাই বিমানবন্দর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ভারতের কর্তৃপক্ষগুলো ইতোমধ্যেই তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। তকতের তাণ্ডবে ইতোমধ্যেই অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

আরব সাগরে উৎপত্তি হওয়া তকতের প্রভাবে ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং প্রবল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বহু গাছ উপড়ে পড়েছে।

উপকূল অতিক্রম করার পর ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৭৫ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি গুজরাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তকতে গুজরাটের ভাবনগর জেলার পোরবন্দর ও মাহুভার মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানকার নিচু এলাকাগুলো থেকে প্রায় ২৫ হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আর পুরো রাজ্যজুড়ে দেড় লাখেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

রাজ্যটির কর্মকর্তারা অতি ভারি বৃষ্টিপাত ও ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগের ঝড়ো বাতাসের সম্ভাবনা সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।   

ভাবনগরের পাশাপাশি রাজ্যটির জুনাগড়, গির সোমনাথ ও আমরেলি জেলায়ও সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। 

পোরবন্দর, আমরেলি, জুনাগড়, গির সোমনাথ, বোতাদ, ভাবনগর ও আহমেদাবাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা লোকজনকে উড়ন্ত বস্তুর বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং বৈদ্যুতিক লাইন ও টেলিফোন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা জলোচ্ছ্বাসে রাস্তা ডুবে যেতে পারে, রেল লাইনের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে এবং সিগন্যাল স্টিসটেমে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তকতের কারণে গুজরাটের লবণ চাষ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভারতের যে রাজ্যগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমে সবচেয়ে বেশি পর্যদুস্ত হয়েছে গুজরাট সেগুলোর অন্যতম। রাজ্যটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজারেরও বেশি।

রোববার তকতের প্রভাবে কর্নাটক, কেরালা ও গোয়া রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবল ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়, ভারি বৃষ্টি হয় ও জোয়ারের সময় সাগরে প্রবল ঢেউ দেখা দেয়। এই রাজ্যগুলোতে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছয় জনের মৃত্যু হয়।