কোভিড: একদিনে রেকর্ড মৃত্যু ভারতে মৃতের সংখ্যা নিল আড়াই লাখে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারীর কেন্দ্র হয়ে ওঠা ভারতে একদিনে রেকর্ড মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এতে দেশটিতে ‍মোট মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 04:45 AM
Updated : 12 May 2021, 07:38 AM

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বুধবার সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে আর একই সময় নতুন রোগী বেড়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪২১ জন।

মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে এদিনই সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে দুই লাখ ৫৪ হাজার ১৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে।

মোট মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর বিশ্বে তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। 

এদিন আগের দিনের চেয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। একদিন আগে সেখানে প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এতে টানা দুই দিন শনাক্ত নতুন রোগীর সংখ্যা কমার পর ফের বৃদ্ধি ঘটল।

নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের মোট সংখ্যা দুই কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। 

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারত দ্বিতীয় স্থানে আছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সরকারি হিসাবে দেশটিতে বিরাজমান মহামারীর প্রকৃত চিত্র অনেকটাই প্রতিফলিত হয়নি। দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ‍গুণ বেশি হতে পারে বলে মনে করেন তারা। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব অনুয়ারি, এখন বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত প্রতি তিন জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে।

সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে দৈনিক তিন লাখেরও বেশি (কখনও কখনও চার লাখেরও বেশি) রোগী শনাক্ত হতে থাকা দেশটিতে হাসপাতালগুলো শয্যা, চিকিৎসা কর্মী, ওষুধ ও করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংকটে ধুঁকছে। মৃতদেহের স্তুপে মর্গে স্থান সংকট ও শেষকৃত্য করার মতো শশ্মানেরও  অভাব দেখা দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউ শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এখন ছোট শহর ও গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এ মাত্রার মহামারী সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা না থাকায় সংকট গভীর হয়ে উঠেছে। 

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামাঞ্চলে শব পোড়ানোর মতো পর্যাপ্ত কাঠের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা উত্তরাঞ্চলের সমভূমিগুলোর স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

এমনকী রাজধানী নয়া দিল্লিতেও কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া বহু রোগীর স্বজনরা শবদেহ পোড়ানোর পর ধর্মীয় আচার না পালন করেই চলে যাচ্ছেন। ছাই ধোয়া, মৃতদের জন্য প্রার্থনা করা ও ছাই নদীতে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো কাজগুলো স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন।

বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন বলে পরিচিত বি.১.৬১৭ ধরনটি এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ৪৪টি দেশে শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় ধরনটিকে ‘বিশ্বের উদ্বেগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব সংস্থাটি।

মহামারীতে পর্যদুস্ত দেশটিতে এখন টিকারও সংকট দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্র ও দিল্লি সবচেয়ে প্রাদুর্ভাব আক্রান্ত অঞ্চল হলেও এখানেই করোনাভাইরাস টিকার সংকট সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।   

সার্বিক অবস্থায় পরিস্থিতি সামলাতে দেশজুড়ে লকডাউন দেওয়ার জন্য অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। সংক্রমণের ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে দেশটির অনেকগুলো রাজ্য লকডাউন জারি করেছে। আরও বহু রাজ্য একই পথ অনুসরণ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।