সংক্রমণের নতুন ঢেউ, লড়ছে ভারতের প্রতিবেশীরাও

করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খাবি খাওয়া ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের মাত্রা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2021, 11:09 AM
Updated : 9 May 2021, 11:09 AM

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার দুর্বল অবকাঠামো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না- এই আতঙ্কে দেশগুলো এরই মধ্যে ভ্রমণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নানান বিধিনিষেধও আরোপ করেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

কয়েক মাস সংক্রমণ তুলনামূলক কম থাকার পর মার্চ থেকে ভারতে দৈনিক শনাক্ত রোগী ও করোনাভাইরাসে মৃত্যু হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এক সপ্তাহে পঞ্চমবারের মতো চার লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়। পরপর দুই দিন দৈনিক মৃত্যু চার হাজার ছাড়িয়ে যায়। 

ভারতের পাশাপাশি এর সীমান্তবর্তী দেশগুলোতেও শনাক্ত-মৃত্যুর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে, যদিও একেকটি দেশের ক্ষেত্রে গতিপথ একেক ধরনের।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপালের পরিস্থিতি নিয়েই এখন উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে এপ্রিলের পর থেকে সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে রেড ক্রস জানিয়েছে, হিমালয়ের পাদদেশের ছোট এই দেশটিতে এখন সব শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৪০ শতাংশের বেশি ‘পজিটিভ’ ফল আসছে। 

ভারতের সঙ্গে নেপালের স্থলসীমান্ত এক হাজার ৮৮০ কিলোমিটারের। ভ্রমণ, পারিবারিক বা ব্যবসায়িক কাজে দেশদুটির অসংখ্য লোককে নিয়মিতই সীমান্ত পার হতে হয়।

ভারত ভ্রমণের পর নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রর দেহেও প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে জ্ঞানেন্দ্র ঠিক কোথায় ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মার্চে নেপালের কর্তৃপক্ষ সীমান্তের ক্রসিংগুলোতে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করে। ১ মে থেকে তারা ২০টির বেশি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে; কাঠমান্ডু উপত্যকা এলাকায় ২৯ এপ্রিল থেকে আরোপিত হয়েছে নানান বিধিনিষেধ।

ভারতের আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশেও মার্চের শুরুর দিকে শনাক্ত রোগীর ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। সংক্রমণ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ ৫ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে লকডাউন দেয়, যা ধারাবাহিকভাবে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত দিয়ে ভারতে যাত্রী যাওয়া আসা বন্ধ রাখলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

শনাক্ত ও মৃত্যুর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানেও; সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার উপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেখানে এখনও জাতীয় পর্যায়ে কোনো লকডাউন দেওয়া হয়নি; তবে কিছু কিছু প্রদেশের কর্তৃপক্ষ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ নানান বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো কোনো এলাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।

দেশটি ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে থাকা সীমান্তগুলোতে বিধিনিষেধ দিয়েছে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে হুট করে শনাক্ত রোগী বাড়তে দেখে শ্রীলঙ্কা বেশকিছু এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় জমায়েত সীমিত ও ভারত থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোতে শনাক্ত রোগীর এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনকেই অংশত দায়ী করা হচ্ছে; যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল বা দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনগুলোও এই অঞ্চলের অনেক এলাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

দুই মাস আগে হংকংয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিবন্ধিত একটি ল্যাবে নেপালের পাঠানো ১৫টি নমুনার মধ্যে নয়টিতে যুক্তরাজ্যের ধরন ও একটিতে ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে।

এপ্রিলে পাকিস্তানে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেশটির বেশিরভাগ নমুনায় যুক্তরাজ্যের ধরনটি পাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশের কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ধরনের উপস্থিতি শনাক্তের কথাও নিশ্চিত করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া ধরনটি বাংলাদেশেও মিলেছে।

সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সুযোগ খুবই সীমিত হওয়ায় পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে নতুন এসব ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনের কারণেই দেশগুলোতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।

দেশগুলোতে সরকারি হিসাবে সংক্রমণের যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে তা যে ‘প্রকৃত নয়’ কম শনাক্তকরণ পরীক্ষা এবং সেসব পরীক্ষায় তুলনামূলক বেশি সংখ্যক ‘পজিটিভ’ ফলই তা বলে দিচ্ছে।

কোভিড থেকে সুরক্ষায় সতর্কতামূলক নির্দেশনা মানতে জনগণের অনাগ্রহ এবং রাজনীতিকদের কাছ থেকে থেকে আসা বিভ্রান্তিমূলক বার্তাকেও সাম্প্রতিক সঙ্কটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ অনেকে।

দেশগুলোতে টিকাদানের শ্লথগতিও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও এখন পর্যন্ত ‘সত্যিকারের পার্থক্য সৃষ্টি করার মতো’ টিকা নাগরিকদের দিতে পারেনি।

নেপালে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে ৭ দশমিক ২ ডোজ, বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৪, শ্রীলঙ্কায় ৪ দশমিক ৮, পাকিস্তানে ১ এবং আফগানিস্তানে শূন্য দশমিক ৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে বলে সাম্প্রতিক তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।