ভারতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার আহ্বান শিল্প সংঘের

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে মানুষের জীবন রক্ষায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে ভারতের নেতৃস্থানীয় একটি শিল্প সংঘ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 07:15 AM
Updated : 3 May 2021, 07:15 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রোববার কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সভাপতি উদয় কোটাক এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন।

কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ধনকুবের উদয় কোটাক বলেন, “সংকটের এই সন্ধিক্ষণে মৃত্যুর সংখ্যা যখন বাড়ছে, ভোগান্তি কমাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করাসহ শক্তিশালী জাতীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে সিআইআই।”

ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা সংক্রমণের মধ্যে রোববার মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে, মারা গেছেন ৩৬৮৯ জন রোগী। সোমবার সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায়ও প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী মারা গেছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। একই সময় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন তিন লাখ ৬৮ হাজার মানুষ।

মহামারীর এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো তৈরিতে সময় লাগবে জানিয়ে সিআইআই সভাপতি বলেন, “সংক্রমণের এই ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে সর্বোচ্চ স্তর থেকে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।”

১২ দিন ধরে তিন লাখ ছাড়ানো দৈনিক সংক্রমণে ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে ভারতের হাসপাতালগুলো, দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি আর শ্মশানে উপচে পড়া মৃতের ভিড়।

বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করে দেশজুড়ে লকডাউন দিতে চায় না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তারপরও দেশটির অন্তত ১১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মহামারীজনিত বিধিনিষেধ জারি আছে।

রোববার ভারতীয় দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড- ১৯ টাস্কফোর্স কেন্দ্রীয় সরকারকে দেশব্যাপী লকডাউন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং পশ্চিমবঙ্গের পর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যা এবং উত্তরাঞ্চলীয় শিল্প-কারখানার রাজ্য হরিয়ানায় সবশেষ রোববার লকডাউন দেওয়া হয়েছে।

উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, আসাম, অন্ধ্র প্রদেশ এবং রাজস্থানের কোথাও রাত্রিকালীন কারফিউ অথবা সপ্তাহব্যাপী লকডাউন দেওয়া হয়েছে।

লকডাউনে শঙ্কা

গত মাসেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, লকডাউন এড়াতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত বছর করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম মাসগুলোতে চলাচলসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন তিনি। এর ফলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ কমে আসে ভারতের অর্থনীতির আকার।

এ বছর সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গিয়ে দেখা দেয় চিকিৎসাকর্মীর ঘাটতি। বাড়তে থাকা সংক্রমণের উল্লেখ করে সিআইআই সভাপতি কোটাক বলেন, চিকিৎসাকর্মীরা এই চাপ সামাল দিতে পারবে না, তাদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। 

আসছে আন্তর্জাতিক সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ জরুরি অক্সিজেন সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সামগ্রী এবং টিকা উৎপাদনের কাঁচামাল পাঠিয়েছে। রোববার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব জানিয়েছেন, খুব শিগগির ভারতে আরও ভেন্টিলেটর পাঠাবে যুক্তরাজ্য।

দেশটিতে সংক্রমণ ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে সমালোচনা আছে মোদী সরকারের। মার্চ ও এপ্রিলে জনাকীর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশ এবং ধর্মীয় উৎসবে হাজারো মানুষের সমাগম দেখা গেছে। যেখানে মাস্ক ছাড়াই যোগ দিয়েছিলেন বেশিরভাগ মানুষ।

মার্চের শুরুতে করোনাভাইরাসের নতুন এবং আরও বেশি সংক্রামক একটি ধরনের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের একটি উপদেষ্টা ফোরাম সরকারকে সতর্ক করেছিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে।