পশ্চিমবঙ্গের ‘খেলায়’ মোদীকে হারিয়ে বড় জয়ের দুয়ারে মমতার তৃণমূল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার শুরুতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস বড় জয়ের আভাস স্পষ্ট হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 04:24 AM
Updated : 2 May 2021, 12:22 PM

ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিধানসভার ভোট হওয়া ২৯২টি আসনের মধ্যে ২০৪টি আসনে  তৃণমূল আর ৮২টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল।

কলকাতার কালীঘাটে মমতার বাড়ির কাছে তৃণমূলের জোড়া ফুলের শিবিরে দুপুর থেকেই আনন্দ শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে পদ্মফুলের বিজেপির গেরুয়া শিবিরে আঙুল তোলা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে।

দুপুরে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম ছিল- ‘দিদিই ফিরছেন’। আর এনডিটিভি’র শিরোনাম- ‘সুপার ভিক্টরি ফর তৃণমূল’।

রোববার পশ্চিমবঙ্গের পাশপাশি ভারতের আরও তিনটি রাজ্য আসাম, তালিম নাডু ও কেরালা এবং কেন্দ্রশাসিত পদুচেরির বিধানসভা নির্বাচনেরও ভোট গণনা হচ্ছে।

ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রবল সংক্রমণের মধ্যেই গণনাকেন্দ্রগুলোতে কঠোরভাবে সতর্কতাবিধি পালনের মাধ্যমে ভোট গণনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। গণনা কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

প্রাথমিক ভোট গণনায় আসামে বিজেপি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছে, তামিল নাডুতে ডিএমকে বিজয় উৎসব শুরু করে দিয়েছে এবং কেরালায় সিপিএমের নেতৃত্বধীন জোট এলডিএফ ফের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।

১০ বছর আগে বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শাসন কায়েম করেছিলেন মমতা। ২০১৬ সালেও সেই ধারায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই রাজ্যে বিজেপির শক্তিশালী অবস্থান ধরা পড়ে। সেবার এ রাজ্যে ১৮টি আসন পায় নরেন্দ্র মোদীর দল।

এবারের বিধানসভা নির্বাচন ছিল বিজেপির জন্য বাংলা দখলের লড়াই; আর সেই চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেখানে বেশ কয়েকটি জনসভা করেন করোনাভাইরাসের এই মহামারীর মধ্যে।

এদিকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পায়ে চোট পেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে ভোটের প্রচারের পুরোটা সময় তিনি হুইলচেয়ারে ছুটে বেরিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এ মাথা-ওমাথা।

মমতার ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধ নিয়ে মোদীর কথার চালাচালাতি নির্বাচনের আগেই উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। প্রবল মেরুকরণের এ নির্বাচন পরিণত হয় মূলত ‘মমতা বনাম মোদী’ যুদ্ধে।

পশ্চিমবাংলার এবারের ভোট নিয়ে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপশি সরব ছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। বিজেপি বিরোধী পক্ষ যেমন সরব ছিলেন তেমনি মমতার বিপক্ষেও বিভিন্ন মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। পক্ষে-বিপক্ষে গান তৈরী করেও আক্রমণ শানিয়েছেন একে অপরের বিরুদ্ধে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৯২টি আসনে। সাত কোটি ৩২ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৮১ শতাংশ।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে গেলে এ রাজ্যে পেতে হবে ১৪৮টি আসন। নির্বাচনের পর বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলই এগিয়ে ছিল।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, ভারতের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে এখন ‘উচ্ছ্বাস’ দেখানোর সময় নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এই তৃণমূল নেতা বলেছেন, “এই জয়ে কোনো বিজয় মিছিল হবে না। এটা আনন্দ করার সময় নয়। রাজ্যে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমার নিজের অনেক আত্মীয় মারা গেছেন। এমনকি যারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই নেই। এই অবস্থায় বিজয় মিছিল বা আনন্দ করার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমার।”

অন্যদিকে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, “জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। যে ফল হতে চলেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেটা ঠিক হয়নি।”

তবে কে সেই নেতা, সে নাম প্রকাশ করেনি আনন্দবাজার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের নাম উচ্চারণ না করে ওই নেতা বলেছেন, “সেনাপতি হয়েছিলেন যারা জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও নিতে হবে।”

এদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায়েকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব। তিনি লিখেছেন- “বাংলার সচেতন নাগরিকরা বিজেপির ঘৃণার রাজনীতিকে হারিয়েছেন। মানুষের সেবায় ব্রতী পরিশ্রমী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের নেতাদের শুভেচ্ছা।”

পশ্চিমবঙ্গের সবার মনোযোগ ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। কারণ এখান থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুমুল লড়াইয়ে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে হারিয়ে তিনি বিকালে পাঁয়ে হেটেই অফিসে ঢোকেন বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।

এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবারই প্রথম পদ্মফুল নিয়ে লড়লেন। ২০১৬ সালে এ আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া শুভেন্দু গতবছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

শুরুতে মমতা পিছিয়ে থাকলেও ব্যবধান ছিল কম। এক পর্যায়ে শুভেন্দুকে পেছনে ফেলেন ‘দিদি’। টানটান উত্তেজনার মধ্যে ১৭ রাউন্ড ভোট গণনা শেষে তিনিই হেসেছেন শেষ হাসি।