ভ্যাকসিন সঙ্কটে ভারতের একাধিক রাজ্য, মুম্বাইয়ে টিকাকেন্দ্র বন্ধ

দেশজুড়ে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সবার টিকাদান শুরুর আগের দিনই ভারতের একাধিক রাজ্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেই বলে জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2021, 09:11 AM
Updated : 30 April 2021, 09:28 AM

ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে মুম্বাইয়ের কর্তৃপক্ষ শহরটির সব টিকাদান কেন্দ্র শুক্রবার থেকে তিনদিন বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ জনের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত ও তিন হাজার ৪৯৮ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ডের খবর দিয়েছে।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে ভারতে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৭ লাখ কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দেশটিতে এর আগের ৭৭ লাখ শনাক্তে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় মাস।

ভারতে সরকারিভাবে শনাক্তের যে খবর মিলছে তাকে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাদের হিসাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি টালির অন্তত ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি।

রয়টার্স লিখেছে, মহামারীর এ পর্যায়ে হাসপাতাল ও মর্গে উপচে পড়া ভিড়, ওষুধ-অক্সিজেনের সংকট আর বড় বড় শহরগুলোতে চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ ভারতকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

দেশটির কিছু কিছু রাজ্যে শ্মশানগুলোতে দেখা যাচ্ছে লাশের দীর্ঘ সারি; অনেক শহরের কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ সৎকারে অস্থায়ী শ্মশান বানাতে জায়গা খুঁজছে বলেও জানাচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। 

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদক দেশ হলেও ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর মতো যথেষ্ট টিকার মজুদ তাদের হাতে নেই।

“টিকা নিতে আমি ২৮ দিন আগে নিবন্ধন করেছি। অথচ এখন তারা বলছে টিকা নেই,” এক ভিডিও পোস্টে এমনটাই বলেছেন টুইটার ব্যবহারকারী জেসমিন ওজা।

জানুয়ারিতে দেশটিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তারা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজ দিতে পেরেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারত প্রথমদিকে অগাস্টের মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখে পরে টিকাদানের আওতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু কাঁচামালের সংকট ও সেরাম ইনস্টিটিউটে অগ্নিকাণ্ডের কারণে দুটি ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতা মাসে ৮ কোটি ডোজের উপরে নিতে পারছে না তারা। 

সেরাম ইনস্টিটিউটই ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা বানাচ্ছে।

ভারতের সরকার শনিবার থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করলেও কর্নাটকের মতো একাধিক রাজ্য জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে তারা আপাতত ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের টিকা দিতে পারবে না।

“কখন ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে, সে বিষয়ে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পায়নি রাজ্য সরকার,” বলেছেন কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর।

পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন।

দেশটিতে দেখা দেওয়া মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশই তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ১০ কোটি ডলার মূল্যমানের সহায়তা সামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

তাদের পাঠানো অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, পালস অক্সিমিটার ও শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিট বহন করা প্রথম মার্কিন বিমান শুক্রবারই দিল্লিতে নামছে।

চীন জানিয়েছে, ভারতে যত দ্রুত সম্ভব ২৫ হাজার অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পাঠাতে তাদের সরবরাহকর্মীরা ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করছেন।

“মহামারীর শুরুর দিকে ভারত যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রও তেমনি তাদের প্রয়োজনের সময় সহযোগিতা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ,” টুইটারে এমনটাই লিখেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।