কোভিড: ভারতে এক দিনে শনাক্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে নিয়ে যাচ্ছে খাদের কিনারে; সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় নতুন বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2021, 06:12 AM
Updated : 24 April 2021, 08:01 AM

ভারত সরকার শনিবার দেশটিতে রেকর্ড তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন ভারতে তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হল।

শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে রেকর্ড দুই হাজার ৬২৪ জন রোগীর মারা গেছেন বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জনে পৌঁছেছে।

ভারতে হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ছে; খালি নেই কোনো শয্যা। অনেক হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ার খবর আসছে।

মহারাষ্ট্রের নাসিকে কয়েকদিন আগে একটি হাসপাতালে আধাঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ২২ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।

মৃতের সংখ্যা এতই বেড়ে গেছে যে আলাদা করে নয় বরং গণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অতুল যোগিয়া বিবিসিকে বলেন, রোগীর সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে জরুরি বিভাগে তিল ধারণের জায়গা নেই।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যতগুলো অক্সিজেন পয়েন্ট আছে সবগুলো রোগীতে পূর্ণ। এখানে আর কোনো অক্সিজেন পয়েন্ট নেই। রোগীরা নিজেদের অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বা অক্সিজেন ছাড়াই হাসপাতালে আসছেন। আমরা তাদের সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমাদের কাছে যথেষ্ট শয্যা বা অক্সিজেন পয়েন্ট নেই। এমনকি পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহও নেই।

‘‘রোগীর স্বজনদের ফোনের চাপে আমাদের টেলিফোন লাইনগুলো জ্যাম হয়ে গেছে। লোকজন ক্রামগত হেল্পলাইনে ফোন করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের বাইরেও প্রচণ্ড ভিড়; অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করা আছে, রোগীদের নিয়ে তাদের স্বজনরা হাসপাতালের ভেতরে ঢোকার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের এখানে আর কোনো জায়গা নেই।”

ভর্তি রোগীর অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলেই তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে সেখানে গুরুতর রোগীদের ভর্তি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক। বলেন, ‘‘তারপরও বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

‘‘গত কয়েক দিনে ধরে প্রতিটি সকালে ফোনের শব্দে আমার ঘুম ভাঙছে। সব সময়ই কেউ না কেউ মরিয়া হয়ে সাহায্য কামনা করছেন।” 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখন লোকজন আক্রান্ত বন্ধু ও স্বজনদের জন্য হাসপাতাল শয্যা, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, ‍অক্সিজেন এবং প্লাজমার জন্য আবেদন জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। কয়েকদিন নিরবতার পর সেই ব্যক্তিই হয়তো তার বন্ধু বা স্বজনের ‍মৃত্যুর খবর দিচ্ছেন।

ভারতের বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থার চেয়েও ‘গুরুতর’ বলে মনে করেন দেশটির একজন শীর্ষ ভাইরোলোজিস্ট। তিনি বলেন, ‘‘এটা পুরো দেশের সব ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়ার অবস্থা। দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মত সংক্রমণের হটস্পটগুলোতে জীবন রক্ষা করতে পারা বা বেঁচে থাকতে পারাটাই এখন আশীর্বাদ।”

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেখানে বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, শুক্রবার সকালে ম্যাক্স হেল্থকেয়ার থেকে এক ‘এসওএস’ বার্তায় দিল্লিতে তাদের দুইটি হাসপাতালে আর একঘণ্টা চলার মত অক্সিজেন আছে বলে জানানো হয়। দিল্লির চারপাশে তাদের ১০টি হাসপাতাল আছে।

গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানাতেও তাদের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে।

দেশজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে ভারতের বিমান বাহিনীকে অক্সিজেন সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অথচ এবছর শুরুর দিকেও অর্থাৎ, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে দৈনিক শনাক্ত ২০ হাজারের নিচে নেমে এসেছিল। সেইসঙ্গে ‍মৃত্যুও অনকে কমে গিয়েছিল। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে কোভিড-১৯ এর গণ টিকাদান কার্যক্রমও শুরু হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল ভয়াবহ এই মহামারীর বিরুদ্ধে ভারত জিতে যাচ্ছে।

কিন্তু মার্চের শুরুতেই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। জনগণের মধ্যে অসচেতনতা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চলা এবং মাস্ক ব্যবহারে অনীহা এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।

এছাড়া, দেশটির পাঁচ রাজ্যে ওই সময় জোরেশোরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়। ভিড় করে চলে মিটিং, মিছল, সমাবেশ। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুরো দেশ ঘুরে ঘুরে নির্বাচনী সমাবেশ করতে থাকেন। যে সমাবেশগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না।

সেইসঙ্গে চলেছে ধর্মীয় নানা উৎসব আয়োজন। গঙ্গা নদীর পাড়ে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় লাখ লাখ মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে অংশ নিয়েছে।

ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন একাধিক ধরন শনাক্ত হয়েছে। এমনকি ‘দুইবার রূপ পরিবর্তন করা’ ধরনও পাওয়া গেছে বলে ‍জানায় বিবিসি।

অনেক দেশ ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।