কোভিড-১৯: অক্সিজেন নেই দিল্লির বহু হাসপাতালে

বিশ্বে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার যখন ভারতে, তখন রাজধানী দিল্লির অন্তত ছয়টি হাসপাতালে অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2021, 04:24 AM
Updated : 23 April 2021, 04:25 AM

বিবিসি জানিয়েছে, অক্সিজেনের অপেক্ষায় বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বাকি হাসপাতালেও মাত্র কয়েক ঘণ্টা চালানোর মতো অক্সিজেন আছে বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য।

দিল্লির হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৯৯ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাত। বৃহস্পতিবার বিশ্বে দৈনিক করোনাভাইরাসে নতুন সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হয়েছে সেদেশে।

এখন পর্যন্ত এক কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং মারা গেছে ২ হাজার ১০৪ জন।

দিল্লিভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি জানিয়েছে, অন্যান্য রাজ্যের জন্য নির্ধারিত অক্সিজেন বহনকারী ট্যাংকারগুলো দিল্লির রাজ্য কর্তৃপক্ষ আটকে দিচ্ছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন মজুদ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভারতীয় রাজনীতিক সৌরভ ভরদ্বাজ টুইটারে হিন্দিতে লেখা এক বার্তায় অক্সিজেনের জন্য সহায়তা চেয়ে বলেছেন, তিনি যে হাসপাতালে আছেন সেখানে মাত্র তিন ঘণ্টার অক্সিজেন মজুদ আছে।  

“অনেক মানুষ অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল এবং অক্সিজেন ছাড়া এই মানুষগুলো ডাঙায় তোলা মাছের মতো মারা যাবে। এখন সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময়।”

বিবিসির ভারতীয় সংবাদদাতা যোগিতা লিমায়ে বলেন, ভারতে অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্বলিত শহর হিসেবে দিল্লির সুনাম রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাম্প্রতিক এই ঊর্ধ্বগতি রাজধানীর স্বাস্থ্যসেবা খাতকে নাকাল করে ফেলেছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, শেষকৃত্য করার জন্য শ্মশানেও দীর্ঘ প্রতীক্ষায় মৃতের স্বজনেরা।

উত্তরপূর্ব দিল্লির একটি শ্মশানের পরিচালক জিতেন্দর সিং সুন্তি রয়টার্সকে বলেন, “মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের সময় আমাদের এখানে দিনে আট থেকে দশ জনের মরদেহের সৎকার করা হতো। এটি একদিন সর্বোচ্চ ১৮ জনে পৌঁছেছিলো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত রাতে (বৃহস্পতিবার) আমরা ৭৮ জনের মরদেহের সৎকার করেছি।”

সরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। “রোগীরা চিকিৎসকদের আঘাত করার চেষ্টা করছেন। সব কিছুর জন্য তারা চিকিৎসকদের দোষারোপ করছেন। এমনকী হাসপাতালের প্রশাসনও চিকিৎসকদের দায়ী করছে।”

“আমরা বর্তমানে হাসপাতালের ৯৯ শতাংশ অক্সিজেন পোর্ট ব্যবহার করছি - মাত্র ১ শতাংশ বাকি আছে। খুবই হতাশাজনক পরিস্থিতি।”

কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

অক্সিজেনের সরবরাহ সংকট নিরসনে বৃহস্পতিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

একটি সরকারি বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংকট নিরসনে বিস্তৃত পরিসরে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কোথায় অক্সিজেন বেশি দরকার তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।

দেশজুড়ে অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুততর করতে বিমান পরিসেবা ও সরাসরি ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে সরকারি বার্তায়।