মিয়ানমার: সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় সমাবেশে প্রতিবাদকারীরা

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতে জনগণের সমর্থন আছে বলে দেশটির সেনাবাহিনী যে ভাষ্য হাজির করেছে তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ দেখানোর আশা নিয়ে ইয়াঙ্গনে জড়ো হয়েছেন অভ্যুত্থানবিরোধী কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2021, 08:03 AM
Updated : 17 Feb 2021, 08:03 AM

চলতি মাসের শুরুতে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে নতুন নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতি দিলেও বিক্ষোভকারীরা সামরিক জান্তার এ আশ্বাসের ব্যাপারে ব্যাপক সন্দিহান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে; এদিন সু চির বিরুদ্ধে পুলিশের নতুন অভিযোগের খবরও জানাজানি হয়।

শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রী ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের দিন থেকেই আটক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রথমে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে ছয়টি ওয়াকি-টকি আমদানির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখন এর সঙ্গে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন’ লংঘনের অভিযোগও যুক্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক শুনানিতে যুক্ত হন তিনি; তার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে ১ মার্চ।

সংবাদ সম্মেলনে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের পেছনে গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ‘জালিয়াতি’কে কারণ হিসেবে হাজির করেছে। ওই নির্বাচনে সু চির দল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল। 

সেনাবাহিনী যে বক্তব্য দিয়েছে সে প্রসঙ্গে খিন নামের এক বিক্ষোভকারী বুধবার বলেন “তারা যা বলছে, তা পুরোপুরি অসত্য। আমি তাদের কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না।

“তার বলছে যে ভোটে জালিয়াতি হয়েছে; কিন্তু দেখুন এখানে কত লোক,” বলেন ইয়াঙ্গনের বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র সুলে প্যাগোড়ায় জড়ো হওয়া কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীদের একজন খিন।

দেশটিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন চলছে; কিছু কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে।

অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ইয়াংগন এবং মিয়ানমারের অন্যত্র গাড়িচালকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ‘ব্রোকেন ডাউন কার ক্যাম্পেইন’ চালাচ্ছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। এর মাধ্যমে বনেট তোলা স্থবির গাড়িগুলোকে বিভিন্ন সড়ক ও সেতুতে এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয় যেন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর ট্রাকগুলো বাধা পায়।

“আমরা সত্যটা চাই। সত্য হচ্ছে গণতন্ত্র এবং অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের মুক্তি,” বলেছেন ২৬ বছর বয়সী কো ইয়ে; যার গাড়ি সুলে প্যাগোড়ায় ‘ব্রেক ডাউন’ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর এ ক্ষমতা দখল পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা কুড়িয়েছে। সু চির বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেকে নতুন করে ক্ষুব্ধ করেছে।

চীন এ অভ্যুত্থান নিয়ে তুলনামূলক নরম সুরে কথা বললেও মিয়ানমারে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ রেপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

“মিয়ানমারের জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার ওপর ধারাবাহিক দমনপীড়ন এখনি বন্ধ হওয়া উচিত,” এক বিবৃতিতে বলেছেন তিনি।

অভ্যুত্থানের দিন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিন্টকেও আটক করা হয়। সেদিন থেকে সেনাবাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়ে কয়েকশ লোককে আটক করেছে। এদের বেশিরভাগেই নিরাপত্তা বাহিনীর রাতের অভিযানে আটকই হয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে সু চির দল এনএলডির জ্যেষ্ঠ নেতারাও আছেন।

রাতের বেলায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ফলে অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের শঙ্কা আরও বেড়েছে। 

মিয়ানমারে রাজনৈতিক বন্দিদের সহযোগিতা দেওয়া একটি গোষ্ঠী অভ্যুত্থানের দিন থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে চারশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।