‘যে কোনো মূল্যে’ মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান রোহিঙ্গা নেতার

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের নেতাদের বন্দি করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন একজন রোহিঙ্গা নেতা, যিনি এ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যের মত বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনযাপন করছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2021, 06:34 AM
Updated : 1 Feb 2021, 08:09 AM

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেন, “আমরা রোহিঙ্গা সম্প্রদায় মিয়ানমারে গণতন্ত্রকে হত্যার এই জঘন্য চেষ্টার নিন্দা জানাই।

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, আপনার এগিয়ে আসুন, যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।”

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পর সোমবার ভোরে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের হাতে।

এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ল, সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তা বাড়ল বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ভাগ্যেও।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

এরপর গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করাই ছিল ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।

সেনাবাহিনীর ওই সাঁড়াশি অভিযানে অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয় বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

আর অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে’ দিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস’ করেছে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে ‘ব্যর্থ হয়েছে’। এর মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার সরকারও নৃশংসতায় ‘ভূমিকা’ রেখেছে।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের জন্য। রোহিঙ্গারাও তাকে সমর্থন দিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন নিয়ে তার দীর্ঘ নীরবতায় বিশ্বের সেই আস্থা টলে যায়।

এক পর্যায়ে সু চি যখন তার অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করলেন, তখন তা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেই যায়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে তিনি ওই অভিযোগকে ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’হিসেবে বর্ণনা করেন, যা নিপীড়িত ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে হতাশার জন্ম দেয়। 

আরও পড়ুন