প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও দমছেন না ভারতের আন্দোলনকারী কৃষকরা

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের কাছে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনরত কৃষকরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2020, 11:13 AM
Updated : 17 Dec 2020, 11:13 AM

ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দিল্লি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডাও আন্দোলনরত কৃষকদের দমাতে পারছে না। বিতর্কিত আইনগুলো বাতিল না হলে ফিরবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা।

টানা ২২দিন ধরে কৃষকরা যেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করছেন বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানে ৩৭ বছর বয়সী এক পাঞ্জাবি কৃষকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 “আমরা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়ছি; আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি পূরণ হবে। এমনকি বৃষ্টি হলেও আমরা নড়বো না,” বৃহস্পতিবার সকালে সিঙ্গু সীমান্তের কাছে এক কৃষককে এমনটাই বলতে শোনা গেছে।

সেখানে আন্দোলনরত কৃষকরা কনকনে ঠাণ্ড বাতাসের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে বসে ছিলেন।

গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লি ও এর আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস কম বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

“আমাদের শীত লাগছে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকবো,” বলেছেন একদল কৃষক।

ভারতের ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল; দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন এ কৃষি সংস্কার আইনগুলো ভারতের নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থাকে ভেঙে দেবে এবং সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; যার ফলশ্রুতিতে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।

আইনগুলো এভাবে জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে দাবি করে কৃষকরা আইনগুলো বাতিল, ফসল কিনতে সরকারের বাধ্যবাধকতা বহালসহ আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড শীতে মৃত্যুবরণ করা কৃষকের ১০-১২ বছর বয়সী তিনটি সন্তান রয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ নিয়ে নভেম্বরের শেষদিক থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদে ২০ জনের বেশি আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো। বেশিরভাগ মৃত্যুই বাড়তে থাকা ঠাণ্ডা এবং উত্তর ভারতের উপর দিয়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের কারণে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে অনেক স্থানেই আন্দোলনরত কৃষকদের আগুন পোহাতে দেখা গেছে; দিল্লি মহাসড়কের কাছে বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে কম্বল ও হিটার দিয়ে সহায়তা করছেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে ওই পাঞ্জাবি কৃষকের মৃতদেহ মেলার কয়েক ঘণ্টা আগে আন্দোলনের কেন্দ্র দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের কাছে কৃষক আন্দোলনের সমর্থক এক শিখ যাজক আত্মহত্যা করেন। হরিয়ানার একটি গুরুদ্বারের যাজক বাবা রাম সিং তার আত্মহত্যার নোটে ‘সরকারের অবিচারে ক্রুদ্ধ ও ব্যথিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বুধবার আন্দোলন নিয়ে করা বেশ কয়েকটি পিটিশনের শুনানি করতে গিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কৃষক ও সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।

কৃষক আন্দোলন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হওয়ার আগেই এর একটি সমাধান বের করা দরকার, বলেছেন তারা।

আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ও কৃষক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ কয়েকদফা বৈঠক হলেও সেগুলোতে ফল হয়নি। সরকার চাইছে, পাস হওয়া কৃষি আইনগুলোর দুয়েকটি ধারা সংশোধনী করে কৃষকদের শঙ্কা দূর করতে।

অপরদিকে কৃষকরা সংশোধনীর প্রস্তাব মানতে চাইছে না, তারা চাইছে সরকার বিতর্কিত এ তিনটি আইন পুরোপুরি বাতিল করে কৃষি ও কৃষক সুরক্ষায় আরও নজর দিক।